পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় 8令令 আমরা কি বলিতে পারি “টেবিলে উন্টে পড়ে ?” “জল পাইলে ধান বাড়ে” ন৷ বলিয়া “ধানে বাড়ে” বলা যায় কি ? “গাছে ফুল ধরে” এই যে দৃষ্টান্ত তিনি দিয়াছেন—এখানে গাছে”র এবিভক্তি কি সপ্তমী বিভক্তি নহে? অর্থাৎ ফুলধরা ব্যাপারট। গাছে ঘটে ইহাই কি বক্তব্য নহে ? এ বাক্যে “গাছে” শব্দ কি কর্তৃপদ ? ஆ “বেদে লেখে” “ইতিহাসে বলে” প্রভৃতি দৃষ্টাস্তে বেদ ও ইতিহাস নিঃসন্দেহ অচেতন পদার্থরূপে ব্যবহৃত হয় নাই। এখানে বেদ ও ইতিহাসকে মানুষরূপে দেখা হইতেছে ।

  • ইংরেজ সৈন্যদলে ভারতবর্ষে আছে” বা “কয়েদীতে জেলে আছে” এরূপ বাক্য কি বাংলাভাষায় সম্ভব ?

“বালকে ঘুমায়” অচেষ্টক ক্রিয়াবিশিষ্ট এই দৃষ্টাস্তটি আমার মনে আসিয়াছিল কিন্তু এরূপ প্রয়োগ চলে কিনা সে সম্বন্ধে আমার দ্বিধা দূর হয় নাই। “ঘোড়ায় দাড়াইয়া দাড়াইয়। ঘুমায়” বা “কুমীরে চোখ চাহিয়া ঘুমায়” বা “হাসপাতালের এই ঘরে রোগীতে ঘুমায়” এরূপ প্রয়োগ প্রচলিত কিনা সন্দেহ হইতে লাগিল । মুস্কিল এই যে, যে সব কথা আমরা সহজেই বলিয়া থাকি তাহাদের সম্বন্ধে মনে প্রশ্ন উদয় হইলে আর দিশা পাওয়া যায় না। একবার মনে হয় বুঝি এরূপ চলে, একবার মনে হয় চলে না । “ঘুমায়” ক্রিয়া সম্বন্ধে যাহাই স্থির হউক না কেন, আমি যে লিখিয়াছিলাম সচেষ্টক ক্রিয়ার যোগেই কর্তৃপদে একার বসে— এ নিয়মটিকে গ্রাহ করা যায় না। "প্লেগে স্ত্রীলোকেই অধিক মরে” এস্থলে মরা ক্রিয়া অচেষ্টক সন্দেহ নাই । “বেশি আদর পেলে ভালমাহুষেও বিগড়ে যায়”, “অধ্যবসায়ের দ্বারা মূর্থেও পণ্ডিত হতে পারে”, “অকস্মাৎ মৃত্যুর আশঙ্কায় বীরপুরুষেও ভীত হয়” এসকল অচেষ্টক ক্রিয়ার দৃষ্টাস্তে আমার নিয়ম খাটে না। কিন্তু “আছে” ক্রিয়ার স্থলে কর্তৃপদে একার বসে না, এ নিয়মের ব্যতিক্রম এখনও ভাবিয়া পাই নাই ।” রবীন্দ্রনাথের আবেদনে সাড়া দিয়া ষোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মাৰ সংখ্যায় “বাঙ্গালা ব্যাকরণে বিচাৰ্য্য” নামে লেখেন : “আশ্বিন মাসের প্রবাসীতে শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় বাঙ্গাঙ্গ৷ বহুবচনের ‘এ’ বিভক্তি সম্বন্ধে আমার স্থত্রের অসম্পূর্ণতা দেখাইয়াছেন।