পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -দ্বিতীয় সংস্করণ.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধবন্তাত্মক শবদ ২৯ সৈন্যদলের পশ্চাতে যেমন একদল আতুযাত্রিক থাকে তাহার রীতিমতো সৈন্য নহে, অথচ সৈন্যদের নানাবিধ প্রয়োজন সরবরাহ করে, ইহারাও বাংলা ভাষার পশ্চাতে সেইরূপ ঝণকে ঝাকে ফিরিয়া সহস্ৰ কৰ্ম্ম করিয়া থাকে, অথচ রীতিমতো শব্দশ্রেণীতে ভৰ্ত্তি হইয়া অভিধানকারের নিকট সম্মান প্রাপ্ত হয় নাই । ইহারা অত্যন্ত কাজের, অথচ অজ্ঞাত অবজ্ঞাত । ইহারা না থাকিলে বাংলা ভাষায় বর্ণনার পাঠ একেবারে উঠাইয়া দিতে হয় । পূর্বেই আভাস দিয়াছি, বাংলা ভাষায় সকল প্রকার ইন্দ্রিয়বোধই অধিকাংশস্থলে শ্রুতিগম্য ধ্বনির আকারে ব্যক্ত হইয়া থাকে । গতির দ্রুততা প্রধানত চক্ষুরিন্দ্রিয়ের বিষয়—কিন্তু আমরা বলি ধা করিয়া, সঁা করিয়া, বে। করিয়া, অথবা ভো করিয়| চলিয়া গেল। তীর প্রভৃতি দ্রুতগামী পদার্থ বাতাসে উক্তরূপ ধ্বনি করে, সেই ধ্বনি আশ্রয় করিয়া বাংলা ভাষা চকিতের মধ্যে তীরের উপমা মনে আনয়ন করে । “তাঁরবেগে চলিয়া গেল” বলিলে প্রথমে অর্থবোধ ও পরে কল্পনা উদ্রেক হইতে সময় লাগে ; ‘স।” শব্দের অর্থের বালাই নাই, সেইজন্য কল্পনাকে সে অব্যবহিত ভাবে ঠেলা দিয়া চেতাইয়া তোলে। ইহার এক সুবিধা এই যে, ধ্বনিবৈচিত্র্য এত সহজে এত বর্ণনাবৈচিত্র্যের অবতারণা করিতে পারে যে, তাহা অর্থবদ্ধ শব্দদ্বারা প্রকাশ করা দুঃসাধ্য। ‘সা করিয়া গেল’ এবং ‘গটগট করিয়া গেল’ উভয়েই দ্রুতগতি প্রকাশ করিতেছে, অথচ উভয়ের