পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

tion, women's liberation, children's liberation, liberation of unconscious drives, liberation of art. The assumption of all models of representation, as of all models of anti-representaiton’ (The transperancy of evil: ১৯৯৬: ৩)। বর্তমান যখন অস্থির, কেন্দ্রচ্যুত ও নিরালম্ব— উপস্থাপনার সমস্ত আকল্প ধ্বস্ত হয়ে যেতে বাধ্য। সন্দর্ভ ও প্রতিসন্দর্ভের যাবতীয় আয়োজন যেন হঠাৎ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। এই সময় যেন নিজেই মাদকে রূপান্তরিত; নিষ্কর্ষরিক্ত কার্নিভালের হুল্লোড়ে। ভেসে যাচ্ছে বাস্তব, কল্পনা, যুক্তি, তর্ক, বিশ্লেষণ, সংকট ও দ্যোতনা। বাখতিন নিশ্চয় এমন প্রতিজগতের কথা ভাবতে পারেননি যেখানে প্রতিবাচনের সন্ত্রাসে বাচনের জমি। ও আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বস্তু-চিহ্ন-বার্তা-আকাঙক্ষা-ভাবকল্পের অতি উৎপাদনে প্রতিটি পথের সম্ভাবনা রুদ্ধ হয়ে গেছে। প্রতিরূপেরও প্রতিরূপ তৈরি করতে করতে আমরা ক্লান্ত ও অবসন্ন এখন।

 বাখতিন-চর্চায় নিজের সাধ্য অনুযায়ী যেদিন যোগ দিয়েছিলাম, পরিবেশ আজকের মতো এতটা আবিল হয়ে যায়নি। সাহিত্য ও জীবনের আশ্চর্য দ্বিরালাপের অংশীদার হয়ে মনে হয়েছিল, বাঙালি পড়ুয়াদের কাছে প্রণালীবদ্ধভাবে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরা যায়। একেবারে ব্যর্থ হয়েছিল সেই অধ্যবসায়, একথা নিশ্চয়ই বলা যায় না। বাখতিনের তত্ত্ববিশ্বে ভ্রমণ-প্রত্যাশী সহযাত্রীর সংখ্যা তখন যা ছিল, সেই তুলনায় গত কয়েক বছরে অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে নিশ্চয়। তবু যে-পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই পথের উপযোগিতা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে এখন। একই পথে যে অভিন্ন লক্ষ্যে যাত্রার অভিনিবেশ অক্ষুন্ন থাকবে— তা ভাবার কারণ নেই কোনও। কতটা রূপান্তরিত হয়েছে পথ ও লক্ষ্য, যাত্রায় কতটা নতুন গতি সঞ্চারিত হয়েছে, তা অনুধাবন করার আগেই জরুরি হয়ে পড়েছিল বাখতিনের পুনঃপাঠ। আমরা কি বিপুল শূন্যায়তনে প্রতিরূপেরও প্রতিরূপ গড়ে তুলছি কেবলই? বিভিন্ন ধরনের মুক্ত লক্ষ্য ইতিমধ্যে বিলীয়মান দিগন্তরেখার মতো অনেক দূরে সরে গেছে। যেসব চিহ্ন, প্রকরণ, আকাঙ্ক্ষা আমরা নিজেরাই উৎপাদন করেছিলাম— সেসব কি উৎপাদককেই গ্রাস করতে চাইছে আজ?

 বিশ শতকের অন্তিম দশকের সূচনাপর্বে যখন বাখতিন-চর্চার শুরু করেছিলাম, সে সময় নির্মাণবায়নের চোরাবালি এতটা হিংস্র হয়ে ওঠেনি। এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার দাপট এমন ভাবে যাবতীয় অপর পরিসরকে মুছে ফেলতে বেপরোয়া আগ্রাসন শুরু করেনি। বাখতিনের দেওয়া চিন্তাসূত্র ব্যবহার নিজেদের জীবন-জগৎ-সাহিত্য-মনন নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে উদ্যমী হয়েছিলাম। প্রত্যুত্তরযোগ্যতা, নির্মিতিবিজ্ঞান, উদ্যমের দর্শন সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি ইংরেজি ভাষান্তরে তখনও পাইনি। নব্য উপনিবেশবাদের প্রতাপ ও বিশ্বায়িত প্রযুক্তির তুমুল প্রভাবে ধীরে-বীরে বাড়তে লাগল বদ্রিয়ার-কথিত, ‘epidemic of simulation,’ (তদেব: ৪) এবং সেই সূত্রে অনিশ্চয়তা ও অনির্ণেয়তা। বাখতিনেরর যথাপ্রাপ্ত স্থিতি-র ধারণা কি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে তাতে? নাকি অস্থিতিমূলক স্থিতিকে যথাপ্রাপ্ত বলে ধরে নিয়ে জীবন ও জগতের বয়ান তৈরি করব এখন? ‘দ্রষ্টা চক্ষু’র ধারণায় ‘দৃষ্টি’র বহুস্বরিক তাৎপর্য প্রতিরূপায়ণের মোড়কে কি ঝাপসা হয়ে যাবে—নাকি নতুন উজ্জ্বলতা নিয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে? ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন

১২