পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সহযোগী-সত্তা হিসেবে তাঁর ভূমিকার নতুন পর্যায় শুরু হচ্ছে। এবছর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্যে সরকারি অনুদান বিপুল মাত্রায় কমতে শুরু করেছে। অতএব বেসরকারি প্রতিবেদনের বহুমাত্রিক গুরুত্ব স্পষ্ট হচ্ছে। অসুস্থ শরীর নিয়েই প্রচুর পড়ছেন, নানা বিষয়ে অসংখ্য খসড়া তৈরি করছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন, লাগাতার চা ও সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠছে। ফেব্রুয়ারি মাসে কাগানকে চিঠিতে জানাচ্ছেন, ‘শাব্দিক সৃষ্টির বিভিন্ন আকল্প' সম্পর্কিত বই লিখছেন তিনি। ভিটেব্‌ক্স-এর সংবাদপত্রে (মার্চ মাসে) জানানো হচ্ছে, বাখতিন নৈতিক দর্শন বিষয়ে বই লিখছেন।
১৯২২...: শাগালের পর যিনি ভিটেব্‌ক্স আর্ট আকাদেমির কর্ণধার হয়েছিলেন; সেই কাসিমির মালেভিচ সংস্থা থেকে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে সমাজতান্ত্রিক শিল্পচেতনার প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ হচ্ছেন বাখতিন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন-পরিসরে স্ত্রী এলেনা ক্রমশ সঞ্চালক হয়ে উঠছেন। জানুয়ারিতে কাগানকে চিঠিতে জানাচ্ছেন বাখতিন যে নৈতিক জীবন ও আইন পরিসরে বিষয়ীর ভূমিকা সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখছেন তিনি, যা নৈতিক দর্শন সম্পর্কিত বইয়ের ভূমিকা হিসেবে পরিকল্পিত। পেট্রোগ্রাদ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘দি লাইফ অফ আর্ট’-এর আগস্ট সংখ্যায় জানানো হচ্ছে যে বাখতিন ডস্টয়েভস্কি সম্পর্কিত বই এবং শাব্দিক সৃষ্টির নন্দন বিষয়ে পুস্তিকা লেখা শেষ করেছেন।
১৯২৪...: বাখতিনের চিন্তা-জীবনে আদিপর্যায় শেষ হচ্ছে। পরবর্তী কালে যেসব রচনা ‘প্রত্যুত্তরযোগ্যতার নির্মিতিবিজ্ঞান’ নামক সামূহিক অভিধায় উপস্থাপিত হয়েছে, তাদের বয়ান নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এই সময়পর্বে। নিত্য সঙ্গী অসুস্থতা নিয়েই সৃষ্টিমুখর হতে পারছেন বাখতিন। কিন্তু নানা ধরনের জীবিকা সত্ত্বেও ছোট্ট শহরে খুব বেশি আয় করতে পারছেন না। এসময় তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়াতে পরিবার বাখতিনের ওপর নির্ভরশীল। হয়ে পড়েছে। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশে উপার্জনের পথও খুব সহজ ছিল না। মস্কো, পেট্রোগ্রাদ বা অন্য কোনও মাঝারি মাপের শহরে বন্ধুদের চেষ্টা সত্ত্বেও শৈক্ষিক জীবিকার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। তবু প্রতিকূল পরিবেশেও অক্ষুণ্ণ থাকছে নতুন নতুন চিন্তাবীজের অঙ্গুরায়ন। এবছর, প্রয়াত হচ্ছেন লেনিন। বাখতিন ফিরে আসছেন লেনিনগ্রাদে
১৯২৫...: পাঁচ বছর ব্যাপী বিপুল সৃষ্টিশীলতার সূচনা। এই সময়পর্বে ফ্রয়েডীয় মতবাদ: মার্ক্সীয় সমালোচনা, সাহিত্যিক গবেষণায় প্রকরণবাদী পদ্ধতি, মার্ক্সবাদ ও ভাষাদর্শন এবং ডস্টয়েভস্কি ও তাঁর নন্দন—এই চারটে প্রধান গ্রন্থ ছাড়াও বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। এসময় বাখতিন-চিন্তাবৃত্ত সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছেছে। তবে সহযোগী সত্তাদের মধ্যে বৌদ্ধিক দ্বিরালাপের কোনও অভাব নেই। বাখতিনের অস্থিপীড়া এমন মারাত্মক পর্যায়ে পৌছেছে যে দ্বিতীয় শ্রেণীর রাষ্ট্রীয় ভাতার জন্যে তিনি মনোনীত হয়েছেন। তবু জীবিকার চিন্তা থেকে তিনি রেহাই পাননি কারণ বার্ষিক পুনর্বিবেচনায় ভাতা ক্রমাগত কমে
১৭

বাখতিন - ২