পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
যাচ্ছিল। গৃহযুদ্ধের অবসান হওয়াতে শিল্প-সাহিত্য ও বৌদ্ধিক চর্চার জন্যে অবশ্য আর্থিক অনুদান পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যমের বাইরেও কিছু কিছু প্রকাশন সংস্থা সক্রিয় থাকতে পারছে। কিন্তু নেভেল ও ভিটেব্‌স্ক-এর পরিস্থিতির প্রতিতুলনায় লেনিনগ্রাদের বৌদ্ধিক বর্গের মধ্যে বাখতিন প্রায় সম্পূর্ণ অপরিচিত তখন। কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। তাই সহযোগী বন্ধুদের নামে তাঁকে লেখা প্রকাশ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে উপার্জনের ক্ষেত্রে কোনও ইতর-বিশেষ হয়নি। লেনিনগ্রাদে আসার কয়েক মাস পরেই তাঁর ভাতা কমিয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে নিয়ে আসা হয়; আর ১৯২৯-এ চতুর্থ শ্রেণীতে। এসময় তার মা প্যারিতে বড়ো ছেলে নিকোলাইকে বারবার চিঠিতে লিখছেন: মিশাকে (মিখায়েলের বাড়ির নাম) যতটা পারো সাহায্য করো। বেচারা বক্তৃতা দিয়ে ও ছাত্র পড়িয়ে মাসে পনেরো থেকে পঁচিশ রুবাল মাত্র আয় করতে পারছে। ১৯২৭ পর্যন্ত লেনিনগ্রাদ রাষ্ট্রীয় প্রকাশন সংস্থায় অনিয়মিত কাজ পেয়েছেন বাখতিন। এছাড়া নানা বেসরকারি সভা-সমিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দিয়ে কিছু কিছু রোজগার হচ্ছে। ১৯২৭ পর্যন্ত বন্ধুদের বাড়িতে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এর পরে নির্দিষ্ট একটা বাসস্থান অবশ্য হয়েছে। এত অস্থিরতা ও দুর্বিপাক সত্ত্বেও বাখতিন-চিন্তাবৃত্তের বৌদ্ধিক অবস্থান ক্রমশ দৃঢ়তর হচ্ছে।
১৯২৮...: স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূচনা। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনের জন্যে কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিশেষত শিল্পায়ন ও কৃষিক্ষেত্রে যৌথ খামারের ব্যবস্থা সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। নিরক্ষরতা দূর করার জন্যে ও মদ্যপানের মতো কুপ্রথা নিবারণের উদ্দেশ্যে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ক্রমশ তার পরিধি নানাদিকে বিস্তৃত হচ্ছে। বুর্জোয়া মতবাদ ও অভ্যাসের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তাতে বহু সাহিত্যিক ও সাহিত্যতাত্ত্বিকেরা প্রতিক্রিয়াশীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন।
১৯২৯...: খ্রিষ্টীয় যাজকেরা বিশেষভাবে পীড়নের শিকার হচ্ছেন। লেনিনগ্রাদের বৌদ্ধিক কেন্দ্রগুলিতে প্রকরণবাদীরা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। অন্যান্য লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল হয়ে পড়েছে। বাখতিন-চিন্তাবৃত্তের শরিকেরাও নিপীড়ন এড়াতে পারেননি। ৭ জানুয়ারি স্বয়ং বাখতিন গ্রেপ্তার। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ: তিনি তরুণ প্রজন্মের মনকে বিদূষিত করছেন এবং রাশিয়ার সাম্যবাদী সরকারের পক্ষে তিনি আশঙ্কার কারণ। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাঁর স্বাস্থ্যের এতদূর অবনতি ঘটছে যে শল্য-চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে গোর্কির প্রাক্তন স্ত্রীর সাহায্য নিয়ে য়ুদিনা বাখতিনের ওপর আরোপিত শাস্তির মাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছেন। গোর্কি ও ঔপন্যাসিক অ্যালেক্সেই টলস্টয় বাখতিনের মুক্তির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে তারবার্তা পাঠাচ্ছেন। ফলে শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাঁকে
১৮