পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

Act-এর প্রাক্‌কথন কাব্যিক ভাষায় লিখেছেন: ‘Bakhtin in this volume is seeking to get back to the naked immediacy of experience as it is felt from within the utmost particularity of a specific life, the molten lava of events as they happen. He seeks the sheer quality of happening in life before the magma of such experience cools, hardening into igneous theories, or accounts of what has happened. And just as lava differs from the rock it will become, so the two states of lived experience, on the one hand, and systems for registering such experience on the other, are fundamentally different from each other.’ (1995: X)

 অভিজ্ঞতার নগ্ন প্রত্যক্ষতাকে যখন অগ্ন্যুৎপাত জনিত লাভাস্রোত উদ্‌গীরণের সঙ্গে তুলনা করা হয়, ভাষ্যকারের নিজস্ব দৃষ্টিকোন অস্পষ্ট থাকে না। ঘটনা যখন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঘটতে থাকে, পর্যবেক্ষক সত্তা ঘটমান বর্তমানের শরিক; তরল আগুনের স্রোত ও উত্তাপে বিহ্বল হবেন না তিনি। কোনো-না-কোনো ভাবে নিজেকে বিবিক্ত করে নেবেন উত্তাল প্রবাহ ও ঝল্‌সানো আঁচ থেকে; নইলে তিনি দেখবেন না কিছু। অর্জিত হবে না কোনো অভিজ্ঞতা। বিশেষ জীবনের চূড়ান্তভাবে নির্দিষ্ট অবস্থানের গণ্ডি থেকে অনুভব করতে হয় ঘটনা-পরম্পরার তাৎপর্য। উদ্গীর্ণ লাভাস্রোত জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলাস্তরে পরিণত হয়; কিন্তু লাভা ও শিলা আলাদা। তেমনই অভিজ্ঞতাপুঞ্জ পাথরীভূত হয়ে ক্রমশ নানা ধরনের তত্ত্ববীজে রূপান্তর লাভ করে। একদিকে জীবনের অজস্র যথাপ্রাপ্ত অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে সেইসব অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রণালীবদ্ধ কৃৎকৌশল: এই দুইয়ের পার্থক্য অনস্বীকার্য। আবার সেইসঙ্গে সত্য তাদের দ্বিবাচনিক সম্পর্কও। অভিজ্ঞতা আমাদের তত্ত্বে পৌঁছে দেবেই যেহেতু তত্ত্বকে এড়ানোর কোনো জো নেই। যাঁরা অভিজ্ঞতার ওপর সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে তত্ত্বকে খারিজ করতে চান, তাঁদের একবাচনিক তত্ত্ব-বিরোধিতাও স্বভাবে তাত্ত্বিক। এইজন্যে প্রত্যুত্তর-যোগ্যতা ও উদ্যমের মধ্যে সুড়ঙ্গলালিত সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বাখতিনীয় আকল্প অনুযায়ী আমরা এক ধরনের আস্তিত্বিক বিবিক্ততার ইশারা পাই যেন। সময় ও পরিসরে ব্যাপ্ত ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও যৌক্তিকতার বিন্যাস আমার লক্ষ করি কৃত্য বা উদ্যমের জগতে এবং সেই সঙ্গে তাদের তাৎপর্যসন্ধান প্রক্রিয়ায়। এই দুটির সমান্তরাল উপস্থিতি সত্য নিশ্চয়; কিন্তু ঐ উপস্থিতির মধ্যে যে ঐক্য-প্রতীতি ব্যক্ত হয়, তা কখনো আরোপিত নয়। এই প্রতীতিকে সর্বদা ও সর্বত্র প্রণালীবদ্ধ ভাবে অর্জন করতে হয়। এই অর্জনের সূত্রে আসে দায়বোধ ও নৈতিকতার প্রসঙ্গ, কথা ও কর্মের ব্যবধান দূর করে অস্তিত্বের সংগঠনে নন্দন ও দর্শনের প্রতিষ্ঠা সম্ভব করা তোলা। বাখতিনের একটি প্রসিদ্ধ মন্তব্য আরো একবার স্মরণ করা যায়: ‘It is only my nonalibi in being that transforms an empty possibility into an actual answerable act or deed.’ (১৯৯৫: ৮২)।


চার

এই মন্তব্যের নিষ্কর্ষ নিয়ে বাখতিন-বিশেজ্ঞরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। আমরা শুধু লক্ষ করব, শূন্য সম্ভাবনার রূপান্তর ঘটছে প্রকৃত বা বাস্তব কোনো প্রত্যুত্তরযোগ্য কর্মোদ্যমে। তার মানে এই শূন্য রিক্ত নয়; বরং সৃষ্টির প্রাক্-মুহূর্তের মতো গর্ভিত।

৬১