পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

আর্টিষ্ট তাই তিনি বলেছিলেন—“সবহি মূরত বীচ অমূরত, মূরতকী বলিহারী”। যে সেরা আর্টিষ্ট তারি গড়া যা কিছু তারি মধ্যে এইটে লক্ষ্য করছি—ভালমন্দ সব মূর্তির মধ্যে অমূর্তি বিরাজ করছেন! “ঐসা লো নহিঁ তৈসা লো, মৈঁ কেহি বিধি কথৌঁ গম্ভীরা লো”—সুন্দর যে অসুন্দরের মধ্যেও আছে এ গভীর কথা বুঝিয়ে বলা শক্ত তাই কবীর এক কথায় সব তর্ক শেষ করিলেন “বিছুড়ি নহিঁ মিলিহো”—বিচ্ছিন্নভাবে তাকে খুঁজে পাবে না। কিন্তু এই যে সুন্দরের অখণ্ড ধারণা কবীর পেলেন তার মূলে কি ভাবের সাধনা ছিল জানতে মন সহজেই উৎসুক হয়; এর উত্তর কবীর যা দিয়েছিলেন তার সঙ্গে সব আর্টিষ্টের এক ছাড়া দুই মত নেই দেখা যায়—“সংতো সহজ সমাধ ভলী, সাঁঈসে মিলন ভয়ো জা দিনতে সুরত ন অন্তি চলি॥ আঁখ ন মুদুঁ কান ন রূংধু, কায়া কষ্ট ন ধারূঁ। খুলে নয়ন মৈ হঁস হঁস দেখুঁ সুন্দর রূপ নিহারূঁ॥” সহজ সমাধিই ভাল, হেসে চাও দেখবে সব সুন্দর, যার মনে হাসি নেই তার চোখে সুন্দরও নেই। যার প্রাণে সুর আছে বিশ্বের সুর বেসুর বিবাদী সম্বাদী সবই সুন্দর গান হয়ে মেলে তারি মনে। আর যার কাছে শুধু পুঁথির সুর-সপ্তক স্বরলিপি ও তাল বেতালের বোল মাত্রই আছে, তার বুকের কাছে বিশ্বের সুর এসে তুলোট কাগজের খড়মড়ে শব্দে হঠাৎ পরিণত হয়।

 এখন মানুষের ব্যক্তিগত রুচির উপরে সুন্দর অসুন্দরের বিচারের শেষ নিষ্পত্তিটা যদি ছেড়ে দেওয়া যায় তবে সুন্দর অসুন্দরের যাচাই করবার আদর্শ কোন্‌খানে পাওয়া যাবে এই আশঙ্কা সবারই মনে উদয় হয়। সুন্দরকে বাহ্যিক উপমান ধরে’ যাচাই করে নেবার জন্যে এ ব্যস্ততার কারণ আমি খুঁজে পাইনে। ধর, সুন্দরের একটা বাঁধাবাঁধি প্রত্যক্ষ আদর্শ রইলো না, প্রত্যেকে আমরা নিজের নিজের মনের কষ্টিপাথরেই বিশ্বটাকে পরীক্ষা করে চল্লেম—খুব আদিকালে মানুষ আর্টিষ্ট যে ভাবে সুন্দরকে দেখে চলেছিল—এতে করে’ মানুষের সৌন্দর্য উপভোগ সৌন্দর্য সৃষ্টির ধারা কি একদিনের জন্য বন্ধ হ’ল জগতে? বরং আর্টের ইতিহাসে এইটেই দেখতে পাই যে যেমনি কোন জাতি বা দল আর্টের দিক দিয়ে কিছুকে আদর্শ করে’ নিয়ে ধরে’ বসলো পুরুষ-পরম্পরায় অমনি সেখানে রসের ব্যাঘাত হতে আরম্ভ হ’ল, আর্টও