পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

 ভাব ও রসের অন্যান্য বৃত্তি পেয়ে মেঘ এখানে নতুন সচল anatomyতে রূপান্তরিত হল। এখন বলতে পারো মেঘকে তার স্বরূপে রেখে কবিতা লেখা যায় কি না? আমি বলি যায়, কিন্তু অভ্র-বিজ্ঞানের হিসেব মেঘের রূপকে যেমন ছন্দ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখায়, সে ভাবে লিখলে কবিতা হয় না, রংএর ছন্দ বা ছাঁদ, সুরের ছাঁদ, কথার ছাঁদ দিয়ে মেঘের নিজস্ব ও প্রত্যক্ষ ছাঁদ না বদলালে কবিতা হ’তে পারে না, যেমন—

“আজি বর্ষা রাতের শেষে
সজল মেঘের কোমল কালোয়
অরুণ আলো মেশে।
বেণু বনের মাথায় মাথায়
রং লেগেছে পাতায় পাতায়,
রঙের ধরায় হৃদয় হারায়
কোথা যে যায় ভেসে।”

 মনে হবে অপ্রাকৃত কিছু নেই এখানে, কিন্তু কালো শুধু বলা চল্লো না, কোমল কালো না হ’লে ভেসে চলতে পারলো না আকাশে বাতাসে রংএর স্রোত বেয়ে কবির মানসকমল থেকে খসে-পড়া সুর-বোঝাই পাপড়িগুলি সেই দেশের খবর আনতে যে দেশের বাদল বাউল একতারা বাজাচ্ছে সারা বেলা। সকালের প্রকৃত মূর্তিটা হল মেঘের কালোয় একটু আলো কিন্তু টান-টোনের কোমলতা পাতার হিলিমিলি নানা রংএর ঝিলিমিলির মধ্যে তাকে কবি হারিয়ে দিলেন; মেঘের শরীর আলোর কম্পন পেলে, ফটোগ্রাফের মেঘের মতো চোখের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো না। বর্ষার শেষ-রাত্রে সত্যিকার মেঘ যে ভাবে দেখতে দেখতে হারিয়ে যায়, সকালের মধ্যে মিলিয়ে দেয় তার বাঁধারূপ, ঠিক সেই ভাবের একটি গতি পেলে কবির রচনা। সকালে মেঘে একটু আলো পড়েছে এই ফটোগ্রাফটি দিলে না কবিতা; আলো, মেঘ, লতা-পাতার গতিমান ছন্দে ধরা পড়লো শেষ বর্ষার চিরন্তন রস এবং মেঘলোকের লীলা-হিল্লোল। রচনার মধ্যে এই যে রূপের রসের চলাচল গতাগতি, এই নিয়ে হল তফাৎ ঘটনার নোটিসের সঙ্গে রচনার প্রকৃতির। নোটিস সে নির্দেশ করেই থামলো, রচনা চলে গেল গাইতে গাইতে হাসতে হাসতে নাচতে নাচতে