পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



শিল্প ও দেহতত্ত্ব
১০৯

মনের থেকে মনের দিকে এক কাল থেকে আর এক কালে বিচিত্র ভাবে। কবিতায় বা ছবিতে এই ভাবে চলায়মান রং রেখা রূপ ও ভাব দিয়ে যে রচনা তাকে আলঙ্কারিকেরা গতিচিত্র বলেন—অর্থাৎ গতিচিত্রে রূপ বা ভাব কোন বস্তুবিশেষের অঙ্গবিন্যাস বা রূপসংস্থানকে অবলম্বন করে’ দাঁড়িয়ে থাকে না কিন্তু রেখার রংএর ও ভাবের গতাগতি দিয়ে রসের সজীবতা প্রাপ্ত হ’য়ে আসা-যাওয়া করে। বীণার দুই দিকে বাঁধা টানা তারগুলি সোজা লাইনের মতো অবিচিত্র নির্জীব আছে—বলছেও না চলছেও না। সুর এই টানা তারের মধ্যে গতাগতি আরম্ভ করলে অমনি নিশ্চল তার চঞ্চল হ’ল গীতের ছন্দে, ভাবের দ্বারা সজীব হ’ল, গান গাইতে লাগলো, নাচতে থাকলো তালে তালে। পর্দায় পর্দায় খুলে গেল সুরের অসংখ্য পাপড়ি, সোজা anatomyর টানা পাঁচিল ভেঙ্গে বার হ’ল সুরের সুরধুনী-ধারা, নানা ভঙ্গিতে গতিমান। আকাশ এবং মাটি এরি দুই টানের মধ্যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানুষের anatomy-দোরস্ত শরীর। দুই খোঁটায় বাঁধা তারের মতো, এই হল ডাক্তারি anatomyর সঠিক রূপ। আর বাতাসের স্পর্শে আলোর আঘাতে গাছ-ফুল-পাতা-লতা এরা লতিয়ে যাচ্ছে ছড়িয়ে যাচ্ছে শাখা প্রশাখার আঁকা বাঁকা নানা ছন্দের ধারায়; এই হচ্ছে artistic anatomyর সঠিক চেহারা। আর্টিষ্ট রসের সম্পদ নিয়ে ঐশ্বর্যবান, কাযেই রস বণ্টনের বেলায় রসপাত্রের জন্য তাকে খুঁজে বেড়াতে হয় না কুমোরটুলি, সে রসের সঙ্গে রসপাত্রটাও সৃষ্টি করে’ ধরে দেয় ছোট বড় নানা আকারে ইচ্ছা মতো। এই পাত্রসমস্যা শুধু যে ছবি লিখছে তাকেই যে পূরণ করতে হয় তা নয়, রসের পাত্রপাত্রীর anatomy নিয়ে গণ্ডগোল রঙ্গমঞ্চে খুব বেশী রকম উপস্থিত হয়। নানা পৌরাণিক ও কাল্পনিক সমস্ত দেবতা উপদেবতা পশুপক্ষী যা রয়েছে তার anatomy ও model বাস্তবজগৎ থেকে নিলে তো চলে না। হরেরামপুরের সত্যি রাজার anatomy রাজশরীর হলেও রঙ্গমঞ্চের রাজা হবার কাযে যে লাগে তা নয়, একটা মুটের মধ্যে হয়তো রাম রাজার রসটি ফোটাবার উপযুক্ত anatomy খুঁজে পাওয়া যায়। নারীর anatomy হয়তো সীতা সাজবার কালে লাগলো না, একজন ছেলের anatomy দিয়ে দৃশ্যটার মধ্যে উপযুক্ত রসের উপযুক্ত পাত্রটি ধরে দেওয়া গেল। পাখীর কি বানরের কি নারদের ও দেবদেবীর ভাব ভঙ্গি চলন বলন প্রভৃতির পক্ষে যে রকম শরীর-