পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

গঠন উপযুক্ত বোধ হল অধিকারী সেই হিসেবে পাত্র পাত্রী নির্বাচন বা সজ্জিত করে’ নিলে—যেখানে আসল মানুষের উচ্চতা রচয়িতার ভাবনার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারলে না সেখানে রণ্‌পা দিয়ে anatomical মাপ বাড়িয়ে নিতে হ’লো, যেখানে আসল দুহাতের মানুষ কাজে এল না সেখানে গড়া হাত গড়া ডানা ইত্যাদি নানা খুঁটিনাটি ভাঙ্গাচোরা দিয়ে নানা রসের পাত্র-পাত্রী সৃষ্টি করতে হল বেশ-কারকে,—রচয়িতার কল্পনার সঙ্গে অভিনেতার রূপের সামঞ্জস্য এইভাবে লাভ করতে হল নাটকে! কল্পনামূলক যা তাকে প্রকৃত ঘটনার নিয়মে গাঁথা চলে না, আর ঘটনামূলক নাটক সেখানেও একেবারে পাত্র-পাত্রীর সঠিক চেহারাটি নিয়ে কায চলে না, কেননা যে ভাব যে রস ধরতে চেয়েছেন রচয়িতা, তা রচয়িতার কল্পিত পাত্র-পাত্রীর চেহারার সঙ্গে যতটা পারা যায় মেলাতে হয় বেশ-কারকে। এক-একজন বেশ সুঠাম সুশ্রী, পাঠও করতে পারলে বেশ, কিন্তু তবু নাটকের নায়ক-বিশেষের পার্ট তাকে দেওয়া গেল না, কেননা সেখানে নাটক রচয়িতার কল্পিতের সঙ্গে বিশ্ব-রচয়িতার কল্পিত মানুষটির anatomy গঠন ইত্যাদি মিল্লো না। ছবিতেও তেমনি কবিতাতেও তেমনি, ভাবের ছাঁদ অনেক সময়ে মানুষের কি আর কিছুর বাস্তব ও বাঁধা ছাঁদ দিয়ে পুরোপুরি ভাবে প্রকাশ করা যায় না, অদল-বদল ঘটাতেই হয়, কতখানি অদল-বদল সয় তা আর্টিষ্ট যে রসমূর্তি রচনা করছে সেই ভাল বুঝবে আর কেউ তো নয়। চোখে দেখছি যে মানুষ যে সব গাছপালা নদ-নদী পাহাড়-পর্বত আকাশ—এরি উপরে আলো-আঁধার ভাব-ভঙ্গি দিয়ে বিচিত্র রস সৃজন করে’ চল্লেন যাঁর আমরা রচনা তিনি, আর এই যে নানা রেখা নানা রং নানা ছন্দ নানা সুর এদেরই উপরে প্রতিষ্ঠিত করলে মানুষ নিজের কল্পিতটি। মানুষ বিশ্বের আকৃতির প্রতিকৃতি নিজের রচনায় বর্জন করলে বটে, কিন্তু প্রকৃতিটি ধরলে অপূর্ব কৌশলে যার দ্বারা রচনা দ্বিতীয় একটা সৃষ্টির সমান হয়ে উঠলো। এই যে অপূর্ব কৌশল যার দ্বারা মানুষের রচনা মুক্তিলাভ করে ঘটিত জগতের ঘটনা সমস্ত থেকে, এটা কিছুতে লাভ করতে পারে না সেই মানুষ যে এই বিশ্বজোড়া রূপের মূর্ত দিকটার খবরই নিয়ে চলেছে, রসের অমূর্ততা মূর্তকে যেখানে মুক্ত করছে সেখানের কোন সন্ধান নিচ্ছে না, শুধু ফটোযন্ত্রের মতো আকার ধরেই রয়েছে, ছবি ওঠাচ্ছে মাত্র ছবি ফোটাচ্ছে না।