পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মত ও মন্ত্র
১৩৩

আকস্মিক,...চিত্র-গুণের এবং চিত্র-দোষের যথাযথ পর্যবেক্ষণে যাঁহাদের চক্ষু অভ্যস্ত, তাঁহাদের নিকট অজন্তা-গুহা চিত্রাবলী ভারত চিত্রের অনিন্দ্যসুন্দর নিদর্শন বলিয়া মর্যাদা লাভ করিতে অসমর্থ। যাঁহাদের তুলিকাসম্পাতে এই সকল ভিত্তি-চিত্র অঙ্কিত হইয়াছিল, তাঁহারাও পুরাতন ভারতবর্ষে 'চিত্রবিৎ’ বলিয়া কথিত হইতে পারিতেন না। তাঁহারা নমস্য; কিন্তু চিত্রে নহে, চরিত্রে। তাঁহাদের ভিত্তি-চিত্রও প্রশংসার্হ; কিন্তু কলা-লালিত্যে নহে, বিষয়-মাহাত্ম্যে।” (শ্রীঅক্ষয়কুমার মৈত্র, ভারত চিত্র চর্চ্চা)। মতের চশমা দিয়ে দেখলে অজন্তার ছবিতে কেন চাঁদের মধ্যেও অপরিণতি ও কলঙ্ক দেখা যায় এবং সেই দোষ ধরে বিশ্বকর্মাকেও বোকা বলে’ উড়িয়ে দেওয়া চলে, কিন্তু সৃষ্টির প্রকাশ হ’ল স্রষ্টার অভিমতে, শিল্পের প্রকাশ হ’ল শিল্পীর অভিমতটি ধরে’, ব্যক্তিবিশেষের বা শাস্ত্রমতবিশেষের সঙ্গে না মেলাই তার ধর্ম, কাযেই কলঙ্ক ও অপরিণতি যেমন হয় চাঁদের পক্ষে শোভার কারণ, শিল্পের পক্ষেও ঠিক ঐ কথাটাই খাটে। চিত্র-ষড়ঙ্গের কতখানি পরিপূর্ণতা পেলে চিত্র চিত্র হবে চিত্রাভাস হবে না, মডেল ড্রয়িং কতখানি সঠিক হ’লে তবে অজন্তার ছবিকে বলব চিত্র আর কতখানি কাঁচা থাকলে অজন্তার চিত্রাবলী হবে “চিত্র সাহিত্যদর্পণের দোষ-পরিচ্ছেদের অনায়াসলভ্য উদাহরণ” তা বলা কঠিন, তবে পাকা ড্রয়িং হলেই যে সুন্দর চিত্র হয় না এটা বিখ্যাত ফরাসি শিল্পী রোঁদা বলেছেন—“It is a false idea that drawing in itself can be beautiful. It is only beautiful through the truths and the feeling that it translates....There does not exist a single work of art which owes its charm only to balance of line and tone and which makes appeal to the eye alone.” —Rodin. আদর্শ জিনিষটি নিছক অবিদ্যমান জিনিষ, বস্তুতঃ তার সঙ্গে পুরোপুরি মিলন অসম্ভব, ধর্মে-কর্মে, শিল্পে সমাজে, ইতিহাসে, কোন দিক দিয়ে কেউ মেলেনি, না মেলাই হ’ল নিয়ম। সৃষ্টিকর্তার নিরাকার আদর্শ যা আমরা কল্পনা করি তার সঙ্গে সৃষ্ট বস্তুগুলো এক হ’য়ে মিল্লে সৃষ্টিতে প্রলয় আসে, তেমনি শাস্ত্রের আদর্শ গিয়ে শিল্পে মিল্পে শিল্প লোপ পায়—থাকে শুধু শাস্ত্রের পাতায় লেখা ভারত-শিল্পের ছ'ছত্র শ্লোক মাত্র। দাঁড়ি পাল্লা বাটখারা ইত্যাদি নিয়ে চাল ডাল ওজন