পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ধ্যার উৎসব
১৪১

তারও সোজা ফর্মাবাঁধা হিসেবমতো চেহারা, কিন্তু বিচিত্রভাব বিচিত্র রস এসে তার প্রত্যেক পৃষ্ঠা রহস্যপূর্ণ ও বিচিত্র করে' দেয়, কোন বই এক পাতা উল্টেই ফেলে দিই কোনটা বা শেষ হয়ে গেলেও ভাবি আরো হ'লে হ'ত। ভাল গানেও এই, বার বার শুনলেও মন চায় আবার শুনি, ভাল ছবি, তার বেলাতেও এই; এবং সব প্রকৃত জিনিষের মধ্যে এই গুণটি আছে। এবং এই জন্য বাঙলার ইতিহাসের চেয়ে ভাল বাঙলা উপন্যাস ছেলে মেয়েরা কিনে পড়ে জলখাবারের পয়সা বাঁচিয়ে। হস্‌টেলের কেউ ভাল নভেল কিনলে কিছুদিন ধরে' সন্ধ্যেবেলা একটা যেন উৎসব পড়ে' যায় সেখানে। আবার নভেল পড়া এবং উৎসব করা দুই যখন বাতিকে দাঁড়ায় তখন আর ভালমন্দ কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞান থাকে না—একটা কিছু হ’লেই হ’ল এই ভাব দাঁড়ায় তখন। আমাদের সমস্ত কাণ্ড-কারখানা আমোদ-আহ্নাদ যেমন-তেমন হ'চ্ছে, যেমনটি হওয়া উচিত তেমনিটি হচ্ছে না; তার কারণ উৎসবের বাতিক চেগেছে এমন বিষম রকম—দেশে যে উৎসবের বাতি কেমন জ্বল্লো সেদিকে নজর দেবার সময়ই নেই। সময়ে সময়ে দেশে মরার ও জেলে গিয়ে পচবার উৎসব পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাতিক চাগে আমাদেরও মরালোকের শ্রাদ্ধ বাসর সাজাবার এবং জেলের মধ্যে দুগ্‌গোপূজো লাগাবার। উৎসাহটাই যে উৎসবের জনয়িতা তা তো নয়, রক্ত যখন অতিরিক্ত রকম উৎসাহে চলাচল করছে মস্তিষ্কে— তখন বুঝতে হবে জ্বর এল বলে’, নয় জ্বরের চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটলো বলে’। হঠাৎ খেয়াল হ’ল একটা সাম্বৎসরিক কি সম্মিলনী কি আরকিছু খুব ধূমধামে করতে হবে, তখনি ছুটোছুটি পড়ে গেল বক্তা ধরতে ষ্টেজ বাঁধতে, বাদ্যি জোগাড় করতে। এ তে স্বাভাবিক অবস্থার কায নয়। স্বভাবের নিয়মে বসন্ত কালের উৎসব মনে হয় বটে হঠাৎ সুরু হ’ল, কিন্তু এটা ভুল্লে চলবে না যে কোকিলকে এই উৎসবে আসতে হবে বলে’ ফাল্গুন মাস আসবার দশ এগারো মাস আগে থেকে সে গলা সাধছিল এমন গোপনে যে বাতাসও টের পায়নি। গাছগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে শীতকাল ভোর পাতা ফুল কত কি জোগাড় করে' রেখেছে। উৎসবের ঢের আগে বসে' যায় বোধন, তাই সুন্দর হয় উৎসব এবং তার রেশ চলে অনেক দিন ধরে' বাতাসের মধ্যে ঝরা বাসি ফুলের সৌরভের মতো। এই স্বাভাবিক ছন্দে যে উৎসব হয় সেই উৎসব ঠিক উৎসব, শিক্ষা-দীক্ষা সমস্তই