জন্য অথবা বিপশ্চিতাম মতম্-কে বলবৎ রাখার জন্য, এ তর্ক আর্টের জগতে উঠতেই পারে না।
Artist যে উদ্দেশ্যেই কায করুক artএর দিকে চেয়ে করাই হ’ল তার প্রধান কায। ময়ূর নিজের আনন্দে তার চিত্র-বিচিত্র কলাপ বিস্তার করে, বাগানের শোভা কি বনের শোভা কি খাঁচার শোভা তাতে হ’ল কি না হ’ল ময়ূরের মনে একথা উদয়ও হ’ল না; এতটা স্বাধীনতা মানুষ শিল্পে চায় কিন্তু পেলে কই?—ধৰ্ম বল্লে তুমি আমার কাজে লাগো, দেশ বল্লে আমার, এমনি নানাদিক দিয়ে শিকল পড়ে গেল শিল্পের হাতে পায়ে, তারপর একদিন চিরকালের ছাড়া পাখী তার মনিবের পোষ মানলে, ইসারাতে পুচ্ছ ওঠালে নামালে যে শুধু তাই নয়, জলযন্ত্র ঘোরালে ঘটিযন্ত্র চালালে কামান দাগলে নিয়ম মতো!
“অপি শ্রেয়স্করং নৃণাম্ দেববিম্বমলক্ষণম্।
সলক্ষণং মর্ত্ত্যবিম্বম্ নহি শ্রেয়স্করং সদা॥”
এই হুকুমে এককালে আমাদের শিল্পীরা বাঁধা পড়ে' ছিল। পুঁথিকার দেবতা সমস্তের ধ্যান দিলে শিল্পে, সেই ধ্যান মতো গড়ে চল্লো— এই ঘটনাই যদি পুরোপুরি ঘটতো তবে আমাদের art কেবলমাত্র ধ্যানমালার illustration হয়ে যেতো কিন্তু এর চেয়ে যে বড় জিনিষ হয়ে উঠলো বুদ্ধ নটরাজ প্রভৃতি নানা দেবমূর্তি সেটা ধ্যানমালার লিখিত ধ্যানের অতিরিক্ত এবং শিল্পশাস্ত্রের মান-পরিমাণ লক্ষণাদির বাঁধা নিয়মের থেকে স্বতন্ত্র আর কিছু নিয়ে। প্রাচীন দেবমূর্তিগুলি আমাদের বাঙলার কার্তিকের মতো সম্পূর্ণ কাপ্তেনবাবু বা কলে কাটাছাঁটা মরা জিনিষ হয়ে পড়েনি শুধু শিল্পের শিল্প-ক্রিয়। তাদের অমরত্ব দিলে বলে’ এবং শুধু সেইটুকুর জন্য artএর জগতে এইসব দেবতার স্থান হ’ল।
শাস্ত্র বল্লে শিল্পকে ঘাড়ে ধরে', দেবলোকটাই আছে তোমার কাছে, মর্ত্যলোক নেই, যদি বা থাকে তো সেদিকে দৃক্পাত করবে না— তা হ’লে অন্ধ হবে। কিন্তু artist এর পথ স্বতন্ত্র কেননা art সে অনন্যপরতন্ত্রা, শিল্পীর কাছে দেবলোকের স্বপ্ন সেও যেমন প্রত্যক্ষ ও সুন্দর, মর্ত্যলোকের ছবি সেও তেমনি অভাবনীয় সুন্দর ও প্রত্যক্ষ ব্যাপার, দুটোই তুল্য-মূল্য, যদি art হ’ল এবং রসের স্বাদ দিলে।