পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

দাশরথি রায়ের পাঁচালী আমরা অনেকেই পড়ি কতক কতক ভালও লাগে কিন্তু পাঁচালীর ছাঁদে যদি কবিতা ঢালাই করার কড়া আইন করে' দেওয়া যায় হঠাৎ তবে বর্তমানের কোন কবি তাতে ঘাড় পাতবে না, কিম্বা আমি যদি আজ বলি আমার ছাঁদেই বাংলার চিত্রকর যারা এসেছে ও আসছে তাদের ছবি লিখতে হবে এবং গভর্ণমেণ্টের সাহায্যে এটা হঠাৎ একটা আইনে পরিণত করে নিই তবে কেউ সেটা মানবে না, উল্টে বরং শিল্পীর স্বাধীনতায় বিষম ব্যাঘাত দেওয়া হ’ল বলে' আমাকে শুদ্ধ তোপে উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবে। আমাদের শিল্পশাস্ত্রকারদের কড়া মাষ্টার এবং পাহারাওলা হিসেবে দেখলে সত্যই আমাদের সেকালের প্রতি অবিচার করা হবে। পূর্বেকার তাঁরা তখনকার কালের যা উপযোগী বা নিয়ম তারই কথা ভেবে গেছেন, একালে আমাদের কি করা না করা, শাস্ত্রের কোন্‌ আইন মানা না মানা সমস্তই একালের উপরে ছেড়ে দিয়ে গেছেন তাঁরা, শাস্ত্রকে অস্ত্রের মতো এ কালের উপরে নিক্ষেপ করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত করে যার নি!

 তখনকার তাঁরা নানা শিল্পের রীতিনীতি ক্রিয়াকলাপ সংগ্রহ করে’ গেছেন নানা শাস্ত্রের আকারে—

“স্বয়ম্ভূর্ভগবান্‌ লোকহিতার্থ সংগ্রহেণ বৈ,
তৎসারন্তু বশিষ্টাদৈরস্মাভিবৃদ্ধিহেতবে॥”

(শুক্রনীতিসার)।

শুক্রাচার্য্য কেন যে নানা শিল্প নানা সামাজিক রীতিনীতি সংগ্রহ করে’ শুক্রনীতিসার বলে' পুঁথিখানা লিখলেন তা নিজেই বলে গেলেন—

“অল্পায়ুর্ভূভৃদাদর্থং সঙ্ক্ষিপ্তং তৰ্কবিস্তৃতম্
ক্রিয়ৈকদেশবোধিনি শাস্ত্রাণ্যন্যানি সন্তি হি।
সর্ব্বোপজীবকম্‌ লোকস্থিতিকৃন্নীতিশাস্ত্রকম্
ধর্ম্মার্থকামমূলং হি স্মৃতং মোক্ষপ্রদং যতঃ॥”

মুক্তি দেবার জন্য শাস্ত্র, অল্পের মধ্যে অল্পায়ুধকে অনেকখানি বোঝাবার জন্য শাস্ত্র, রক্ষার জন্য শাস্ত্র,—হননের জন্য নয়!

 পৃথিবীর সেকালের ভিত্তির উপরে একালের প্রতিষ্ঠা হল স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠা, সেকাল একালের ঘাড় চেপে পড়লো—বাড়ীর ভিত উঠে এল ছাতের উপরে, এ বড় বিষম প্রতিষ্ঠা! সেকালের বস্তুশিল্প হিসেবেও এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। প্রত্নতত্ত্ব-বিদ্যা তার মাল