পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

এটা ঠিক। এইখানে শিল্পীর প্রতিভাকে স্বীকার করা ছাড়া উপায় রইলো না—কেননা দেখা গেল শাস্ত্রমতো মান পরিমাণ নিখুঁত করেও—“সর্ব্বাঙ্গৈঃ সর্ব্বরম্যোহি কশ্চিলক্ষে প্রজায়তে”–লাখে একটা মেলে সর্ব্বাঙ্গসুন্দর। অতএব ধরে' নেওয়া গেল “শাস্ত্রমানেন যো রম্যঃ স রম্যো নান্য এব হি”। এতে করে’ শাস্ত্রের মান বাড়লো বটে, কিন্তু শিল্পক্রিয়া খর্ব হ’ল। তাই এক সময়ে একদল বল্লে—“ত রম্যং লগ্নং যত্র চ যস্য হৃৎ।” অমনি শাস্ত্রের দিক দিয়ে এর উত্তর এল—“শাস্ত্রমানবিহীনং যৎ সরম্যং তৎ বিপশ্চিতাম্॥” পণ্ডিতের মান বজায় করে শাস্ত্রকার ক্ষান্ত হলেন। কিন্তু এতে করে' আমাদের দেশের শিল্পীরা শিল্পক্রিয়াতে প্রায় বারো আনা যে অপণ্ডিত থেকে যাবে, সেকথা শাস্ত্রকার না ভাবলেও তখনকার শিল্পীরা যে ভাবেনি তা নয়। প্রতিমা-শিল্প সেই এক ছাঁচ ধরে' চল্লো। কিন্তু অন্যান্য শিল্প সমস্ত নতুন নতুন উদ্ভাবনার পথ ধরে' নানা কালের ক্রিয়া প্রক্রিয়ার বৈচিত্র্য ধরে' অফুরন্ত সৌন্দর্য-ধারা বইয়ে চল্লো দেশে।

 চিত্রকলার ইতিহাস এদেশে যেমন বিচিত্র তেমন মূর্তি গড়ার ইতিহাস নয়। বাস্তুবিদ্যা তাও নানা নতুন ক্রিয়া প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলে’ অব্যাহত ধারায় বইলো নতুন থেকে নতুনতর সমস্তকে ধরে'। কিন্তু ঠাকুরঘরের মধ্যে সেই পুরোনো দেবতা বারবার পুনরাবৃত্ত হ’তে হ'তে দেবতার একটা মুখোসমাত্রে পর্যবসিত হ’তে চল্লো। শাস্ত্রমতো ক্রিয়া করে' দেবমূর্তি গড়া প্রায় উঠেই গেছে এখন। ধ্যানগুলো বাহনগুলো কার কি এই নিয়েই কায চলেছে ভাস্করপাড়ায় কতদিন থেকে যে তার ঠিকানা নেই। দেবশিল্প বলে’ যদি কোন সামগ্রী হয়ে থাকে এককালে দেশে তো সে বহুযুগ আগে। তারপর থেকে সে শিল্পের অধঃপতনই হয়েছে বেশী বাঁধাবাঁধির ফলে। ঘরে যে শিল্প এই বাঁধনে পড়ে' মরতে বসলো, বাইরে গিয়ে সেই শিল্প বাঁধন শিথিল পেয়ে দিব্বি বেঁচে গেল দেখতে পাই। নতুন নতুন প্রক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষার স্বাধীনতা শিল্পীর থাকলো তবেই শিল্পক্রিয়া চল্লো, না হ’লে শিল্পের দুর্দশার সূত্রপাত হ’ল—শাস্ত্রের দ্বারায় সে বিপদ ঠেকানো গেল না।

 শিল্পশাস্ত্রে আমাদের দেশে এখানে ওখানে যা ছড়ানো রয়েছে তা থেকে সব শিল্পের তালিকা এবং বাস্তু মন্দির মঠ নির্মাণ, নগর-স্থাপন, বিচার-পদ্ধতি, নাগরিকের চাল-চোলের সম্বন্ধে নানা কথা এবং এই রকম