পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পশাস্ত্রের ক্রিয়াকাণ্ড
১৫৫

নানা ব্যাপারের মধ্যে পূজার অঙ্গ হিসেবে প্রতিমা-নিৰ্মাণ, তার বাহন ব্যবস্থা ইত্যাদিরই খুঁটিনাটি মাপজোখের কথা পাই। চিত্র বিষয়ে দু’একখানা পুঁথিও পাওয়া যায়। কিন্তু এই সব পুঁথিতে কোন কোন শিল্পকে অঙ্গবিদ্যা হিসেবে দেখে আংশিকভাবে সেই সম্বন্ধে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। Artএর পাঠ্য পুস্তক হিসেবে এগুলো বেশী কাজের হবে না, এই আমার বিশ্বাস। চিত্র যদি শিখতে চাই তবে চিত্রশালাতে যেতেই হবে আমাদের। প্রাচীন চিত্রে কেমন করে' রেখাপাত, কেমন করে' বর্ণপ্রলেপ, কেমন করে’ নানা অলঙ্কার বর্ধনা ইত্যাদি দেওয়া হ’ত—তার প্রক্রিয়া ছবি দেখেই আমাদের শিখে নিতে হবে। কোনো শিল্পশাস্ত্রে এ সমস্ত প্রক্রিয়া নিখুঁতভাবে ধরা নেই। কেমন কাগজে ছবি খেলা হ’ত, কি কি বর্ণ সংযোগ হ’ত, কোথায় কোথায় কেমন ধারা পালিস দেওয়া হ’ত ছবিতে, কত রকম তুলির টান, কত রকম রংএর খেলা, কত বিচিত্র ভাবভঙ্গি রেখার ও লেখার—এ সমস্ত এক একখানি ছবি দেখে' শেখা ছাড়া উপায় নেই। শাস্ত্রে কুলোয় না এত বিচিত্র প্রক্রিয়ার রহস্য সমস্ত হয়েছে ছবির মধ্যে ধরা মোগল বাদসাদের আমল পর্যন্ত, তারপর এসেছে ইয়োরোপ জাপান চীন থেকে নতুন নতুন প্রক্রিয়ায় রচনা করা ছবি। এর চেয়ে প্রকাণ্ড পরিষ্কার সুন্দর শিল্প ব্যাখ্যানের পুঁথি যার পাতায় পাতায় ছবি পাতায় পাতায় উপদেশ এমন আর কি হতে পারে! এই পুথির একখানি পাতা সংগ্রহ করে' নিয়ে চলেছে বিদেশের তারা কত অর্থব্যয়ে নিজেদের শিল্পজ্ঞান জাগিয়ে তুলতে। আর আমরা টাকার অভাবে একটা ছোটখাটো চিত্রশালাও রাখতে পারছিনে দেশে। পাথরগুলো মন্দিরগুলো ভেঙে নেবার উপায় নেই— না হ’লে ভাস্কর্যশিল্পের নিদর্শন দেখে আর আমাদের কিছু শেখার উপায় বিদেশীরা রাখতো না।

 ভাবতে পারো original ছবির মূর্তি নাই হ’ল, reproduction দেখেই আমরা শিল্প কাযে পাকা হ’য়ে উঠবো, পুঁথি পড়ে' পাকা হয়ে যাবো,—এ মতের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলবার নেই। কেননা আফ্রিকার অধিবাসী যারা, কোথায় তাদের art gallery কোথায় বা তাদের শিল্পশাস্ত্র। ছবির দিক দিয়ে মূর্তির দিক দিয়ে দেশটা উজাড় হ’লে ক্ষতি এমন কিছু নয়। শুধু মরুভূমিকে চষে আমাদেরই আবার সবুজ করে' তুলতে