পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড
১৬৩

হিসেব ভালমন্দ নির্বিশেষে শাস্ত্রের মধ্যে একটা একটা সময়ে ধরা হ'য়ে গেল এবং সেই শাস্ত্রনির্দেশমত মানুষ ক্রিয়া করে' চল্লো। পরীক্ষা কিন্তু সফলতার দিকেও গেল না, অথচ শাস্ত্রেও এই এই ক্রিয়াতে জল হ’ল না বা মেঘ এল না একথা লেখা রইলো না। কতক মানুষ অসম্পূর্ণ প্রাচীন প্রথা ধরে' ক্রিয়া করে' চল্লো। কিন্তু সত্যি কারিগর কাযের মানুষ যারা তারা ক্রিয়া করেই চল্লো জল মেঘ আনার জন্য সঙ্গীতশাস্ত্র যজনক্রিয়া এবং মেয়েলী শাস্ত্রের অলিখিত ও লিখিত ক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিভিন্ন রাস্তা ধরে'। অম্লজান জলজান নিয়ে নতুন নতুন পরীক্ষা থেকে ক্রিয়া সুরু হ’য়ে এই অল্পদিন হ’ল সেই আদিম যুগের আকাশ ফুটো ক’রে জল বর্ষাণোর যে চিন্তা তার সঙ্গে গিয়ে মিল্লো। ক্রিয়াবান মানুষ নতুন ক্রিয়ার দ্বারা বালুকণাকে তড়িৎ সঞ্চারে শক্তিমান করে' সত্যই আকাশ ফুটো করে' বৃষ্টি বর্ষালে। সেই পুরোনো যুগের পরীক্ষা আর আজকের যুগের পরীক্ষার মধ্যে মানুষের ভাবনা ও কামনাগত সাদৃশ্য সুস্পষ্ট হ’লেও দেখছি পুরোনো প্রক্রিয়াটা ব্যর্থ হয়েছে এবং নতুন ক্রিয়া তার নতুনত্ব নিয়ে তবেই সার্থকতা পেতে চলেছে। অতি প্রাচীন ক্রিয়াবান এবং অত্যন্ত নবীন ক্রিয়াবান এই দুয়ের ক্রিয়ার উপকরণ প্রকরণ, এমন কি ধ্যানটাও, একদিকে মিল্লো একদিকে মিল্লো না। আবার দীপক গেয়ে গেয়ে বহুকাল ধরা-গলা চিরেও কালোয়াৎ তার শাস্ত্রের বচনের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু গান বাজনার দিক দিয়েও গেল না অথচ কারিগর মানুষ তারা নতুন ক্রিয়া নতুন পন্থা ধরে' তারে ও বিনা তারে আগুন জ্বালিয়ে চলেছে আমাদের চোখের সামনে। শাস্ত্রমতো যজ্ঞ-ক্রিয়া সঙ্গীত প্রকরণ ইত্যাদির দরকারই বোধ করছে না তারা এবং ওই সব শাস্ত্রমতো ক্রিয়া হ’ল না বলে তাদের ক্রিয়া যে ব্যর্থ হচ্ছে তাও নয়। ক্রিয়াবান মানুষের শিল্প নানা ক্রিয়া ধরে' যেমন যেমন এগিয়ে চলেছে, তারি অনুসরণ করে’ শিল্পশাস্ত্রকার তেমনি তেমনি হিসেবের খাতা লিখে চলেছে। পণ্ডিত শিল্পশাস্ত্র লিখে পড়িয়ে চল্লেন। শিল্পী তারি উপদেশ অনুসারে যখন পড়তে ও লিখতে আরম্ভ করেছে সে কালটা আজ থেকে খুব দূরে নয়। কিন্তু এই টোলের পড়া বিদ্যে থেকে অনেক দূরে সেই কালটা যে কালে নানা অনুপদিষ্ট উপায় ও ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্রিয়াবান