পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

মানুষ খেলার মুখে ভেঙ্গে চুরমার করে' দেয় তবে পুরাতনের কাছে সে কাণমলা গালাগালি খেয়ে মরে। কিন্তু ক্রিয়া এবং ক্রীড়া দুয়েরই একটা লক্ষণ হ’ল নড়াচড়া ও সজীবতা, সে ভেঙে গড়ে—ঠিক যে ভাবে গতিহীন সোজা দাঁড়িকে গতি দেয় artist ভঙ্গি বা ভঙ্গ দিয়ে; নতুন জাতির জীবন তার সমস্ত ক্রিয়াপ্রবণতা ও ক্রীড়াশীলতা এই ভাবে নিয়োগ করে নিষ্ক্রিয়তাকে ভেঙে ক্রিয়াশীল ক্রীড়াশীল করে' তুলতে। যারা এত বড় যে শাস্ত্রের নিষেধ-বিধির উপরে চলে' গেছে এবং যারা এত ছোট যে শাস্ত্রের বাইরে পড়ে' গেছে—এদের দুজনের জন্যই শাস্ত্র নয়, যারা মাঝারি রকম মানুষ কেবল তাদেরই জন্য শাস্ত্র। এই শাস্ত্র ধরে' গড়ে’ চল্লে তারা ভাল জিনিষের অনুকরণ করে' ক্রমে হয় তো পাকা হয়ে উঠবে—এই জন্যই শিল্পের আইনবাঁধা ক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে মানুষ, ভবিষ্যতের ক্রমবিকাশের পথে কাঁটার বেড়া হিসেবে শাস্ত্র গড়া হয় নি। ধর্মশাস্ত্র, শিল্পশাস্ত্র, সঙ্গীত, অলঙ্কার প্রভৃতি শাস্ত্র কারো কাঁটারোপণ কাজ নয়, চলার পথ নিষ্কণ্টক ও সহজ করে' দিতেই শিল্পশাস্ত্রের সৃষ্টি। যে কিছু জানে না তাকে জানার পথে অগ্রসর করে' দেওয়াই শাস্ত্রের লক্ষ্য। শাস্ত্রের একটা মানে যদিও শাসনে রাখা বোঝায়, তবু শাসনের প্রয়োগ স্থান-কাল-পাত্র-ভেদে রকম রকম না হ’লে মানুষ শাসনের বিরুদ্ধ আচরণ করবেই। শাস্ত্রকারেরা একথা যে ভাবেননি তা নয়, অন্য শাস্ত্রের ফাঁকি কোথায় কি তা আমি জানিনে, শিল্পশাস্ত্রের শাসনে অনেকখানি ফাঁক আছে—“লেখ্যা লেপ্যা সৈকতী চ মৃন্ময়ী পৈষ্টিকী তথা। এতাসাং লক্ষণাভাবে ন কশ্চিৎ দোষ ঈরিতঃ॥”

 প্রাচীন শিল্পশাস্ত্রের শাসন এখন যদি মানতে হয় তো যেমনটি লেখা আছে তেমনি ভাবেই। এখনকার গাইয়ে বাজিয়ে কাব্যকার চিত্রকার সবাইকে ক্রিয়া করে' চলে' যেতে হয় প্রাচীন পথে, নতুন কিছু করার উপায় নেই। বর্তমানকে উজান বইয়ে অতীতের দিকে নিয়ে অতীতের মধ্যে কি ছিল তা জেনে চলা হ'ল শিল্পীর শিক্ষার একটা দিক, তার পরে হ’ল বর্তমানে চারিদিকে দেশ-বিদেশে কোথায় কি রয়েছে জেনে নেওয়া বা যাকে বলি পরখ করে’ গ্রহণ করে' চলা, তারপরে হ’ল ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রেখে ক্রিয়া করে' চলা নিজের প্রথা মতো,—আসল কথা চলা চাই চালানো চাই, না হলেই মুস্কিল। ঠিক যে ভাবে প্রপৌত্র তার প্রপিতামহের কতক