পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পের ক্রিয়া প্রক্রিয়ার ভাল মন্দ
১৭৫

একটা আছে কিন্তু সেই খাটুনীতেই আনন্দ। যতনের খাটুনী অযতনের খাটুনী দুয়ের ফল তফাৎ, মায়ের খাটুনী আর ধাইয়ের খাটুনীর মধ্যে ভারী প্রভেদ দেখা যায়। শিল্প সামগ্রী গঠনের উপর খাটা কি ভাবে হ'ল তার ছাপ পড়ে। যেখানে আর্টিষ্ট যতন দিয়ে গড়লে, সেটি যতনের জিনিস হয়ে প্রকাশ পেল। আর যেখানে সে যতন নিলে না গড়তে, শুধু খেটেখুটে কায উদ্ধার করলে সেখানে গড়নটাও বিশ্রী হয়ে রইল। সেদিন দেখলেম আমার নাতনীটি একটি গুটি থেকে প্রজাপতি ফোটানোর প্রথা প্রকরণ না জেনেই একটা অসম্পূর্ণ ডানাভাঙ্গা প্রজাপতি টেনে এনেছে অসময়ে আলোতে। কাঁচা হাতের তাড়াতাড়ি লেখার মত সেটা ভয়ঙ্কর বিশ্রী দেখতে হ’ল। তারপরে সেদিন শান্তিনিকেতনে গিয়ে দেখলেম কত যত্নে কত পরিশ্রমে সৃষ্টি করা পাখীর ডিম বিনা পাখীতে ফোটাবার কল। পক্ষী-মাতার বুকের পরশ, অদ্ভুত ধীরতা, বুদ্ধি এবং অভিনিবেশ সহকারে দিনের পর দিন ধারণার মধ্যে নিয়ে তবে এই কল গড়া হয়েছে। পাখী নিজে যে আনন্দ বোধ করে বাচ্চা ফোটানোর কাযে, সেই আনন্দ সেই যতন দিয়ে গড়েছে মানুষ তার কল, শত শত পক্ষী-শিশুর উপরে ঢেলে দিয়েছে লোহার কল আপনার প্রকাণ্ড স্নেহ। এই কল গড়তে বা গড়বার প্রকরণে যদি কোথাও ভুল থাকতো, কিম্বা শিল্পী আগুনে যেমন তেমন করে' কলটা গড়ে ফেলতো, তবে মায়ের মতো বাচ্চ। না ফুটিয়ে রাক্ষসীর মত কলটা কেবলই ডিম খেতো, একটিও বাচ্চ। ফিরিয়ে দিতো না মানুষকে, কিম্বা ফেরাতো ভাঙ্গা আধপোড়া অসম্পূর্ণ অবস্থায়। যা' কিছু সৃষ্টি কর তার প্রক্রিয়ার মূলে এই যতন না হ’লে কায ব্যর্থ হয়ে যায়, স্মৃষ্টি অসম্পূর্ণ থাকে অশোভন হয়, অচল হয়।

 লাইন টানার প্রকরণ, রং দেবার প্রকরণ ইত্যাদি ভাল না হ’লে সামগ্রীটা যেমন নজরে ধরে না তেমনি সেই লাইন টানার রঙ দেওয়ার সময়ে হাত এবং মনের কোথাও একটু অযতন ঘটলে করা ঠিক মতো হয় ন, মন থেকে মনের কাযটাও পৌছোয়না। ভোঁতা তীর মচকানো ধনুক নিয়ে কে কবে লক্ষ্যভেদ করেছে, অযতনে গাণ্ডীব টেনেও কেউ লড়াই জেতেনি। “Craft is only a means, but the artist who neglects it will never attain his end.——— Such an artist would be like a horseman, who forgets to give oats to his