পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

যন্ত্রে আর কণ্ঠে রাগ-রাগিণী ভাঁজবারও বাঁধা প্রকরণ আছে আমাদের— সেগুলো শিখলে সহজেই বাজিয়ে আর গাইয়ে দুই-ই হ'তে পারে মানুষ। নাচের বেলায় ছবিমূর্তি গড়ার বেলায় ঐ একই কথা। সুরের রঙ্গের অঙ্গভঙ্গির কতকগুলো প্রকরণ বাঁধা হয়ে গেছে,—বাঁধা রাস্তার মতো সেগুলো সাধারণের পক্ষে সাধারণভাবে চলাচলের বেশ কাজের পথ। কিন্তু এই বাঁধা রাস্তায় বাঁধা অবস্থাতেই যে চল্লো হাতের কায পায়ের কায গলার কায করে', সে বাঁধন আর বাঁধনের বেদনাটাই প্রকাশ করে' চল্লো কাযে, সে তো কখন আপনাকে প্রকরণিক ছাড়া আর্টিষ্ট বলতে পারে না। প্রকরণের বাঁধন যে দরদ দিয়ে আনন্দ দিয়ে মুক্ত করলে সেই হ’ল গুণী; নীরস প্রকরণিকের সঙ্গে তার তফাৎ হ’ল ঐখানে। গুণী সে বাঁধনের কসন রসিয়ে তুল্লে, লসন পৌছে দিলে কসনে; নর্তকীর কোমরে মেখলার বেড় যেমন, তেমনি techniqueএর বাঁধন শোভা ধরলে আর্টিষ্টের গড়নটিকে ঘিরে ঘিরে। Techniqueএর এই যে সকল দিক যা নিয়ে মানুষের হাতের কাযে আর কলে-কাটা কলে-কোঁদা জিনিসে তফাৎ হচ্ছে, কিছু করতে যাবার পূর্বে এটার বিষয়ে যদি আমরা না ভাবি তবে art জিনিস আমাদের দ্বারা করা শক্ত হয়। হাতের কাগজ হাতের কাযে এমনি করে ছেড়ে দিলাম যে সেটি মনের জিনিস হ’য়ে রইলো, মুখের কথা সুরের বেদনায় এমন করে ভরে দিলাম যে তারা মন থেকে মনে চলাচলি করতে লাগলো, মন দুলিয়ে দিয়ে গেল। প্রত্যেক পা ফেলা এই রকম যখন হ’ল তখন জানলেম নানা শিল্পের নানা প্রকরণে সিদ্ধি লাভ করলেন আর্টিষ্ট। গাছ গাছই রইলো, ফুলও দিলে না ফলও দিলে না সে যেমন, আর্টের প্রকরণগুলো আয়ত্তের মধ্যে এসে গেল অথচ তা দিয়ে কিছু ফলানো গেল না বা কোন কিছুকে ফুলের মতে ফুটিয়ে তোলা গেল না; কেবল প্রকরণেরই প্রতিষ্ঠা করে গেলেম কাযে, এ হ’লে নিষ্ফলা গাছ প্রতিষ্ঠা করা হ’ল।

 প্রকরণের সফলতা তখনই যখন সে কিছুর জননী হ’ল, না হ’লে সে সুন্দরী কিন্তু বন্ধ্যা। রসের জনয়িতা আর্ট, সেই আর্ট-সৃষ্টির প্রকরণ নীরস নিরানন্দভাবে গ্রহণ ও প্রয়োগ যে করলে তার সৃষ্টির প্রয়াস ব্যর্থ হ’ল; নিজের কাযে সে প্রয়াসকেই প্রতিষ্ঠিত করলে, প্রসন্নতাকে নয়,—এমন কায দেখে' মন কোনদিন প্রসন্ন হয় না।