পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

হিল্লোল। কলের দোলা সে তো পাত্র বাছে না, তোমাকে আমাকে ছেলেকে বুড়োকে সমানভাবে দুলিয়ে চলে ঝাঁকানি দিয়ে বেসুরে চেঁচিয়ে কিন্তু মায়ের কোলে ছেলের দোলা সে মায়ে মায়ে বিভিন্ন প্রকারের হ’লেও সবার মধ্যে সুর বাজে ব্যথা বাজে না, কাজেই এ রকম দোলানো ক্রিয়ার মধ্যে আনন্দ আছে বলেই সেটাতে ছেলে এবং মা দুজনেই আনন্দ পায়। ছেলের ওজনের একখানা কাঠ কোন মায়ের হাতে দিয়ে তাকে দোলাতে বল—কিছুক্ষণ পরে মায়ের হাত ভেরে যাবে কেননা ছেলে দোলানোর প্রক্রিয়ায় যে আনন্দ কাঠ দোলানোতে সেটি নেই। ছোট মেয়ে কাঠের পুতুল দোলাচ্ছে, সে জানছে কাঠের ছেলেকে ঠিক আপনার ছেলে বলেই, সেলেটখানা দোলাতে দাও সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। হাতুড়ি পেটানোর আনন্দ তখনই পাই যখন পিটে' যে কাযটি করছি সেই কায সম্পূর্ণভাবে মন অধিকার করেছে এবং হাতুড়ি পেটার প্রকরণ সম্পূর্ণভাবে অধিকারে এসেছে আমার। এ না হ’লে কাযে মন কিন্তু হাতে এল না সেটা, কিম্বা হাত পিটেই চল্লো কাজে বসলো না মন,—দুদিক দিয়েই কাযটা ব্যর্থ হয়ে চল্লো। নল রাজার হাতে রথ যেমন চলতো তার ত বর্ণনা পড়েছি এবং সেই ঘোড়া সেই রাশ সেই গাড়ী ছক্কর গাড়ীর কোচম্যানের হাতে কি ভাবে চলে তারও প্রমাণ আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেরই সামনে ধরা আছে। যে গাড়ী হাঁকিয়ে আনন্দ পাচ্ছে এবং যে কোন রকমে সোয়ারি যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে কড়ায় গণ্ডায় ভাড়। চুকিয়ে পেয়েই আনন্দ পাচ্ছে, এই দুয়ের রাশটানার প্রক্রিয়ায় কতখানি তফাৎ তা বেশ বুঝি আমরা। একের স্ফূর্তি রাশের মধ্য দিয়ে ঘোড়াতে পৌঁছোচ্চে, ঘোড়া সুন্দরভাবে ঘাড় বাঁকিয়ে নেচে চলেছে, আর একের হাতের রাশে ত্বরা পৌঁছোচ্চে, কিন্তু ঘোড়া আর একটুও পাচ্ছে না খুঁড়িয়ে চলেছে কিম্বা চাবুকের চোটে বিশ্রী রকম বেগে দৌড়োচ্ছে ঝাঁকানি দিতে দিতে। যে প্রকরণ সম্পূর্ণ কায়দা না হ’লে কেউ আর্টিষ্ট হ’তে পারে না সেটি হচ্ছে আকার গড়বার বা বলবার করবার সামান্য প্রকরণ নয় সেটি হচ্ছে আনন্দের সঙ্গে কর্ম সাধনের অসামান্য-প্রকরণ।

 অনেকের বিশ্বাস যে মূর্তি গড়বার ছবি লেখবার শাস্ত্রীয় প্রকরণগুলি শিখিয়ে দিতে পারলেই দেশে নানা দিক দিয়ে গানের আর্টিষ্ট মূর্তিমান হয়ে এসে উপস্থিত হবে আমাদের মধ্যে শিল্পের মধ্যে।