পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৯০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

করলে মানুষের সকল অধ্যবসায়কে—কেউ হ’ল রাজা, কেউ কবি, কেউ ধম প্রচারক, কেউ আর্টিষ্ট, কেউ বা আর্ট-সমালোচক, কেউ ছাত্র, কেউ মাষ্টার, কেউ কেরাণী, কেউ সওদাগর, চোর ডাকাত কত কি ! সমান প্রবৃত্তি সমান বৃত্তির দিকে চালায় এক দল মানুষকে । সমব্যবসায়ী তারা সমান ভাবের জীবন-যাত্রাল পথ ধরে চলে, এবং এই ভাবে কবির দল, সাহিত্যিকের দল, কারিগরের দল এমনি নানা দল স্বষ্টি হয়ে যায় নানা পথে নানাপন্থী হয়ে ধমপন্থী শিল্পপন্থী কমপন্থী কত কি দেখা দেয় তার ঠিক নেই । কাযে প্রবৃত্তি নেই অথচ যখন কাজ করতে হচ্ছে শিল্পীকে, তখন দেখা যায় শিল্পকার্য অবনতি পাচ্ছে । নানা দেশের শিল্পের ইতিহাস থেকে এটা সুস্পষ্ট ধরা পড়ে। শিল্পের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, শৈশব অবস্থায় শিল্পকমের মধ্যে প্রবৃত্তির প্রেরণা প্রবল ভাবে কায করছে— রং দেবার রেখা টানবার প্রবল প্রবৃত্তি এবং তাই নিয়েই খেলা । যে কোন দেশের পল্লী-শিল্পগুলোর চর্চা করে দেখলে দেখি, সেখানে বর্ণ ও রেখার উপর মানুষের একান্ত প্রবৃত্তি পরিষ্কার ধরা যায় । আর্টের শৈশব অবস্থায় প্রবৃত্তির প্রবলতা বশে রংএর প্রাচুর্য রেখার সরলতা নিয়ে ঢেলে দিচ্ছে আপনাকে মানুষের মন সরলভাবে খেলার পুতুল, গায়ের কাথা, ঘরের ঘটি-বাটি, সাজ-সরঞ্জাম যা নিজের জন্য এবং যা কিছু পাচজনের জন্য সমস্ত সামগ্রীর উপরে । রঙ দেবার এবং রেখা টানার প্রবল ইচ্ছা শৈশব অবস্থার শিল্পের মূল লক্ষণ ; সেখানে উপাদান বাছে না, মন মাটি ইট কাট সবার উপরে প্রবৃত্তির ছাপ রেখে চলে ঠিক ছোট ছেলে যে ভাবে লাল নীল রঙ পেলে যাতে তাতে মাখায়, আঁচড় টানে সোজ৷ বঁাক নানা রকম ; কতকটা এই ভাবে কাজ করে’ গেল আদিম অবস্থায় মানব শিল্পীরা । যে ছেলে-ভুলানো ছড়াগুলো কত কালের তা কে জানে, তার মধ্যেও শিল্পের এই শৈশব অবস্থার রূপটি মুস্পষ্ট ধরা পড়েছে ; যথা— “এক যে গাছ ছিল লতায় লতিয়ে গেল তার এক কুঁড়ি হ’ল ফুল ফুল ফুল ফুটে গেল।”