পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
শিল্পবৃত্তি
১৯৩

গান বাহন ইত্যাদির উপায় উপকরণ সবই বদলায়, অথচ নৌকা যে স নৌকাই, রথ যে সে রথই থাকে । শিল্প হ’ল এক জিনিষ যা সর্বদেশে সৰ্বকালে সমান, ছাঁচ হ'ল ' উপযুক্ত অনুপযুক্ত ভাল মন্দ ভিন্ন ভিন্ন। যেমন মানুষের মনের কতকগুলো প্রবৃত্তি সব দেশেই এক, কিন্তু ধমের প্রভাবে সমাজের প্রভাবে স্বতন্ত্র ছাচ পেয়ে প্রকাশ পাচ্ছে, শিল্পও ঠিক সেই ভাবে নানারূপে কালে কালে জাতি-ভেদে, সময়-ভেদে, এমন কি শিল্পীতে শিল্পীতে যে একটুখানি চিন্তার শিক্ষা দীক্ষার ভিন্নতা থাকে তার বশেও নতুন নতুন রূপ ও ভাব ভঙ্গি পায় । 總 সব বঁাশীই যুঁয়ে বাজে কিন্তু মেলাতে শিশুর জন্য যে বাশী আসে তার তিনটে ফুটো, খুব বর্বর জাতির মধ্যেও তিন মুরের বেশি সুর নেই, অপেক্ষাকৃত সভ্য জাতির বঁাশীতে পাচটা ফুটে, জাপানে এখনো সঙ্গীত শাস্ত্রে পঁাচ সুরের হিসেব ছাড়া সাতটা মুর নেই,—এমনি পূব পশ্চিম সব দেশেই একই বঁাশী তার ফুটোর হিসেব নিয়ে নানা রকম সঙ্গীতের রাগ-রাগিণীর স্থষ্টি করে চলেছে যেমন, তেমনি শিল্পকলা বড় ছোট নান রাস্ত ধরে নতুন নতুন রসের স্বজন করেছে। মানুষের মনোভাব দেশকালের আবহাওয়া ইত্যাদি জোয়ার ভাটার মতে শিল্পের ধারাকে ছন্দ দিচ্ছে নানা প্রকার, এই হ’ল শিল্পের যৌবনাবস্থার কথা । নিঝর যেমন আপনাকে রূপান্তরিত করলে নদ নদী খালে বিলে তেমনি মানুষের শিল্পও অস্তরের অন্দরমহল থেকে নিঝরি বইয়ে বার হ’ল প্রবৃত্তির প্রেরণায় এবং বাহিরের জগতে নান দিকে যে বিরাট রসের সমুদ্র বিচিত্র ছন্দে দুলছে তার দিক থেকে যে প্রেরণ। এল তারি বশে জোয়ার ভাট। খেলিয়ে চল্লো গ্রামের পাশ দিয়ে, নগরের মধ্য দিয়ে মন্দির মঠ মসজিদ গীর্জ রাজ-অট্টালিক। দীনের কুটীর সব জায়গাতে রকম রকম রস বিলিয়ে ; শিল্পের গতি-বিধির মোটামুটি হিসেব এই ছাড়া অন্তরূপ তো মনে হয় না । শৈশব ও ভর। যৌবন তার মাঝে কৈশোর অবস্থা। নদী যখন কুলহারা অকুলে মিলতে চলেছে খরস্রোতে, আর সে যখন পর্বত শিখর ছেড়ে ঝরে পড়ছে পৃথিবীর দিকে-–এর মধ্যে রয়েছে আরো গোটাকতক অঁাক বঁকি যার মধ্যে জলের বিচিত্র লীলা । O. P. 14—25