পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৯৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

তুর্ক শিল্প ধরতে চলেছে ভারতীর ছন্দ, ফতেপুর শিক্রীর স্থাপত্য, সুফি কবিদের কবিতা এবং কবীরের সমস্ত চিন্তা এই অভিসারে চলেছে, রাজপুতের মেয়ে বসতে চলেছে দিল্লীশ্বরের পাশে। এই যে মিলনের আগেকার অভিসার-পথ শিল্পের পক্ষে বড় সঙ্কটাপন্ন পথ—সমূদ্র যেখানে নদীর দিকে, নদী যেখানে সমুদ্রের দিকে মিলতে চলেছে সেই মোহান পার হতে নাবিককে সাবধান হ’তে হয়, এ পাকা নাবিক মাত্রেই জানে। অগাধ সমুদ্রে নাবিকের তত ভয় নেই, বন্দরে তো সে একেবারেই নির্ভয় ; কিন্তু সমুদ্র আর বন্দর দুয়ের মাঝে চোরাবালি যে আছে তাকেই ভয় নাবিকের। , বন্দর থেকে বার হতে বিপদ, বন্দরে প্রবেশ করতে বিপদ—মোগল বাদশার অন্দরে ঢুকতেও বিপদ, সেখান হ’তে বার হ’তেও বিপদ। এই সঙ্কট পেরিয়ে গিয়েছিল এদেশের শিল্প একদিন আকবরের আমলে, মিলন হ’ল গিয়ে সার্থক সাজাহানের সময়ে যখন সত্যকার মোগল-শিল্প দেখা দিলে— তাজমহল। সঙ্গীত-কলার দিক দিয়েও তখন এই মিলন ঘটে গেল, অশন বসন ভূষণ কিছুর কোনদিকই বাদ পড়ল না, কিন্তু এই মিলন যখন বিচ্ছিন্ন হ’ল ঔরঙ্গজেবের সময়ে তখন সকল দিকে শিল্পের অবনতি হতেই চল্লো, হাতের কাজে মনের কাজে জড়ত এল, বিষন্নত এল— বাদশার হুকুমে সঙ্গীত-বিদ্যা গভীর রকমে কবরস্থ করলে কালোয়াৎর, মোগল স্থাপত্য কতদূর অপদার্থতার মধ্যে নেমে গেল তার নিদর্শন লক্ষ্মেী নবাবের প্রাসাদ ও ইমামবারাতে ধরা রইলো। এর পর ইউরোপীয় শিল্পের আবির্ভাব হ’ল, মিলতে চল্লো মোগল শিল্প তার সঙ্গে, মিলন সার্থক হ’ল না, লক্ষেীর লা মারটিনিয়ার কলেজের মতো একট। বীভৎস সৃষ্টিছাড়া জিনিষের উৎপত্তি হ’ল । মোগল হিন্দু এবং সাহেব এই তিন আর্ট কোন ত্রিবেণীসঙ্গমে গিয়ে মিলতে পারলে না । মোগলের আগে যে সব তুর্কীরা এদেশে বিজেতা হিসেবে এল তারা তুরস্ক শিল্পকেও সঙ্গে আনলে এবং মিলিয়ে দিলে বৌদ্ধ শিল্পের শেষ যে ধারা চলছিল তার সঙ্গে—আজমীঢ়, দিল্লী, জৌনপুর, গৌড়, হায়দ্রাবাদ, বিজাপুর এমনি সব স্থান জুড়ে একটা চমৎকার স্থাপত্য শিল্পের আবির্ভাব হ’ল । স্থাপত্যকে শিল্প হিসাবে দেখলে মোগলদের তাজমহলের চেয়ে