পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
শিল্পবৃত্তি
১৯৭

পূর্ববর্তী তুরস্ক শিল্পের অভিযানের নিদর্শনগুলো কোন অংশে কম নয়—আজমীঢ়ের মসজিদ, দিল্লীর কুতুবমিনার, আলত মাসের সমাধি, আলাউদ্দীন খিলিজি ও তোগলক শাহার সমাধি ও মসজিদ, জৌনপুরের আটলা দেবী মসজিদ, আহম্মদাবাদের আবুতোরাবের সমাধি, মাহাফিজ, খার সমাধি, বাজাপুরের ইব্রাহিম রোজা আদিল শাহার গোল গম্বুজ,—দেখলেই বোঝা যায় যে ভারতের স্থাপত্যের সঙ্গে তুরস্কের স্থাপত্যের পরিণয় স্বব্যক্ত ভাবে ঘটেছে, এক ধারার সঙ্গে মিলেছে আর এক ধারা—বাংলার শের শাহের সমাধির গর্ভে লুকোনো দেখি আগ্রার মোগল আমলের তজিবিবির রোজার মুন্দর ছাচ, দিল্লীর তোগলক শাহার কবরের গর্ভে নিহিত রয়েছে মোগল বাদশা হুমায়নের সমাধির আদর, আহম্মদাবাদের আবুতোরাবের সমাধির মধ্যে সঞ্চিত রয়েছে স্থাপত্য-শিল্পে মোগল আমল যে প্রসার ও শুভ্র স্বচষ্ঠতা লাভ করলে সেটি । 驕 এই যে বহির্ভারত এবং অন্তর্ভারত শিল্পের ধারা মিল্লে, তার প্রধান লক্ষণ হ’ল শিল্পের ধারায় পরিষ্কার পারম্পর্য লক্ষিত হ’তে থাকলো ; জলের এক ঢেউয়ের সঙ্গে অন্য ঢেউয়ে যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন হ'ল না, বংশ-পরম্পরায় ছেদ পড়ল না, যদিও স্থান কাল পাত্র বশে তারতম্য হল একটু আধটু মনোভাবের এবং বাইরেরও চেহারার । এমনি মোগল শিল্পের সঙ্গে রাজপুত শিল্পের সংমিশ্রণ—সে ও আর একটা প্রকাণ্ড ইতিহাস । আবার প্রাচীন ভারতের অন্তর যেখানে বহিমুখী হয়ে চল্লো সেখানের ইতিহাস আরও প্রকাগু, আরো রহস্যময় । মানুষের প্রবৃত্তির, জাতির প্রবৃত্তির গতি ধরে যে ভাবে শিল্পের ধারা কালে কালে দেশে দেশে বইলো, সেই অনুসারে শিল্পের চর্চা করে চলাতে শিল্পের প্রাণের ছন্দের হিসেব পাই ; নিছক পুরাতত্ত্বের দিক দিয়ে গেলে একটা মোটামুটি হিসেব ছাড়া আর কিছু পাওয়া সম্ভব হয় না। প্রাচীন এবং আধুনিক বংশ-তালিকা মিলিয়ে একটা বংশের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্মের তারিখ, মৃত্যুর তারিখ, তাদের নাম ধাম সবই পাই কিন্তু সেই বংশের প্রত্যেক মানুষের সম্পূর্ণ চরিত্র ও ইতিহাস কিছুতে তো ধরা পড়ে না, এবং সেই বংশের মধ্যে যে সাধারণ একটি প্রবৃত্তি যা বংশের সব মানুষকে কেমন তার পরিবারে