পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৯৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

এক করে একটা ভাল বা মন্দ গতি দিয়ে চলেছে তারও হিসেব পরিষ্কার ধরতে পারিনে ; শিল্পের চর্চাতেও ঠিক এই ঘটনা ঘটে নিছক পুরাতত্ত্বের দিক দিয়ে শিল্পকে দেখতে গেলে । নিজের প্রবৃত্তি অনুসারে কেউ এ পথে কেউ ও পথে শিল্পের চর্চা করে' চলব আমরা, তারপর এমন দিন আসতেই হবে যখন এই দুই পুথের হিসেব মিলিয়ে তবে শিল্পের পুরোপুরি ইতিহাস সব দেশে রচিত হবে। কবির জীবন, সাহিত্যিকের জীবন, গায়কের জীবন, বাদ্যকরের জীবন, চিত্রকরের ও ভাস্করের জীবন স্ব স্ব অন্তরের প্রবৃত্তি নিয়ে একল নেই—এর বহির্জগতে থেকেও নানা সমাজ ধর্ম শিক্ষাদীক্ষা ও দেশকালের ধম ও মমের সঙ্গে যুক্ত হ’য়ে তবে বর্তমান রয়েছে। তার অতীত, বর্তমান, এবং ভবিষ্যৎ ঘিরে নিয়ে চলেছে তাকে বন্দীর মতো । দেশ কাল প্লাত্র এ সমস্তই গতি দিচ্ছে শিল্পীর মনোবৃত্তি সমস্তকে, এই হ’ল স্বভাবের নিয়ম ; যেখানে এর অভাব সেখানেই শিল্পের ধারা হয় একই অবস্থায় জড়বৎ রয়েছে, নয়তো বদ্ধ জলের মতো আস্তে আস্তে মরছে উজ্জীবনী শক্তির স্পর্শ অভাবে । জলপ্রপাত মরুভূমির উপর দিয়ে ব’য়ে চলার রাস্ত না পেয়ে যদি বালির উপর ছড়িয়ে পড়লো তো সে শুকিয়ে মরলো, আর যেখানে দেশ তাকে বুক পেতে ধারণ করে বইয়ে নিয়ে চল্লো দুই তটের মধ্য দিয়ে, সেখানে নদনদীর স্রোত বইলো। এইভাবে জনসাধারণের প্রবৃত্তি এক এক সময়ে এক এক রসের ধারাকে কখনো বইয়েছে, কখন ব’য়ে চলার বাধাও দিয়েছে। ইংরাজ যখন এ দেশে এল সেই সময়ে প্রথম প্রথম দেশের প্রবৃত্তি বিদেশ মুখে ঘুরে দাড়ালো, নতুনের মোহে পুরাতনকে পরিত্যাগ করলে। ধম কম শিল্প শিক্ষা দক্ষ সব দিক দিয়ে আপনার যা সেটা মুছে গেল আমাদের কাছে, বিদেশের যা কিছু তাই রইলো সামনে খাড়া পাহারার মতো । এই যে এক ভাবে পূব ও পশ্চিম মিল্লো, এ মিলন ঠিক মোগল বা তুর্কি যে ভাবে মিলেছিল ভারতের সঙ্গে সেরূপ মিলন হ’ল না—মোগল বা তুর্কের আমলে এক দেশ রাজবেশে এসে আর এক দেশের পাণিগ্রহণ করলে—ঠিক যে ভাবে এখনো রাজপুত তার ঘোড়ায় চড়ে এসে কন্যাকে কেড়ে নিয়ে যায় বিবাহের রাতে সেই ভাবের ক্ষাত্র বিবাহ হ’ল তখন