হলে নিশ্চয়ই তোড়জোড় ঢের দরকার। লেকচার হল থেকে লেকচারের ম্যাজিক লণ্ঠনটা পর্যন্ত না হলে চলবে না সেখানে। কিন্তু শিল্পজ্ঞান তো শুধু এই বহিরঙ্গীন চর্চা ও প্রয়োগ বিদ্যার দখল নয়; রস, রসের স্ফূর্তি—এসবের আয়োজন যে স্বতন্ত্র। ‘অনন্যপরতন্ত্রা’ শিল্প পাখীপড়ানর খাঁচা, কসরতের আখড়ার দিকেও তো সে এগোয় না, রসপরতন্ত্রতাই হলো তাকে আকর্ষণের প্রধান আয়োজন আর একমাত্র আয়োজন। শুধু এই নয়। স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র মানুষ, মনও তাদের রকম-রকম। রসও বিচিত্র ধরণের। আয়োজনও হলো প্রত্যেকের জন্যে স্বতন্ত্র প্রকারের। একজনের individuality, personality যে আয়োজন করলে, আর একজন সেই আয়োজনের অনুকরণে চল্লেই যে অন্যপরতন্ত্রা এসে তাকে ধরা দেবেন, তা নয়; তাঁর নিজের জন্যে তাঁকে স্বতন্ত্র প্রকারের আয়োজন করতে হবে। জাপানের শিল্প আয়োজন, আমাদের শিল্প আয়োজন, ইউরোপের শিল্প আয়োজন সবগুলো দিয়ে খিঁচুড়ি রাঁধলে এ রকম রস সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু সেটাতে শিল্পরসের আশা করাই ভুল। প্রত্যেকে স্বতন্ত্রভাবে মনের পাত্রে শিল্পরসকে ধরবার যে আয়োজন করে নিলে সেইটেই হল ঠিক আয়োজন, তাতেই ঠিক জিনিষটি পাওয়া যায়; এ ছাড়া অনেকের জন্য একই প্রকারের বিরাট আয়োজন করে পাওয়া যায় সুকৌশলে প্রস্তুত করা সামগ্রী বা প্রকাণ্ড ছাঁচে ঢালাই-করা কোনো একটা আসল জিনিষের নকল মাত্র। Artistএর অন্তর্নিহিত অপরিমিতি (বা infinity) Artist এর স্বতন্ত্রতা (individuality)—এই সমস্তর নির্মিতি নিয়ে যেটি এলো সেইটেই Art, অন্যের নির্মিতির ছাপ, এমন কি বিধাতারও নির্মিতির ছাঁচে ঢালাই হয়ে যা বার হলো তা আসলের নকল বই আর তো কিছুই হলো না। ভাল, মন্দ, অদ্ভুত বা অত্যাশ্চর্য এক রসের সৃষ্টি তো সেটি হলো না। এইটুকুই যথার্থ পার্থক্য Artএ ও না-Artএ। কিন্তু এ যে ভয়ানক পার্থক্য—স্বর্গের সঙ্গে রসাতলের, আলোর সঙ্গে না-আলোর চেয়ে বেশি পার্থক্য। স্বর্গের ঐশ্বর্য আছে, রসাতলের গাম্ভীর্য আছে, রহস্য আছে, আলোর তেজ, অন্ধকারের স্নিগ্ধতা আছে কিন্তু Artএ ও না-Artএ তফাৎ হচ্ছে—একটায় সব রস সব প্রাণ রয়েছে, আর একটায় কিছুই নেই!
Art এর একটা লক্ষণ আড়ম্বরশূন্যতা—Simplicity। অনাবশ্যক