গন্ধটা কিন্তু চেনা নয় বলেই আমার নাকে ভারি অসুন্দর ঠেকলো। এই ব্যক্তিগত রুচি অরুচি ইত্যাদির উপরে যে রচনা উঠতে পারলে তাই যথার্থ সুন্দর হয়ে উঠলো। মানুষ যখন নিজেই একটি ব্যক্তি তখন এই ব্যক্তিগত রুচি অরুচি লোপ করে’ সম্পূর্ণ নিরাসক্ত ও নিরপেক্ষভাবে কিছু রচনা করা তার পক্ষে অসম্ভব। রচনার বিষয় নির্বাচন সেও রুচি অনুসারে করে’ চলে মানুষ; যে চা নিজের জন্য প্রস্তুত করা গেল সে আমার রুচি অনুসারে চিনি দুধ না দিয়ে যেমন তেমন পাত্রে খেলেও কারো কিছু বলবার নেই, কিন্তু পরকে যেখানে নিমন্ত্রণ দিচ্ছি সেখানে পরের মুখ অনেকখানি চেয়ে কার্যটি নিষ্পন্ন করতে হয়, না হ’লে ব্যাপার পণ্ড হতেও পারে। ঘরে মেয়ে যেমন তেমন সেজে বেড়াচ্ছে কারো দৃষ্টি পড়ে না সেদিকে, ঘরের মধ্যে একটি বাইরের লোক আসার খবর আসুক তখন মেয়েটাকে সুন্দর করতে তার ঝুঁটি ধরে’ টানাটানি পড়ে’ যায়। মেয়েটা সেজেগুজে মুখ দেখাতে চলেছে এমন সময় কাঁচি দিয়ে যদি তার বেনে খোঁপাটি কেটে দেওয়া যায় তবে যদি মেয়েটি সত্যিই সুন্দরী হয় তবে একটু কাণাভাঙ্গা সুন্দর পেয়ালাটির মতো চোখেই পড়ে না তার রূপের এই সামান্য খুঁৎ, কিন্তু শুধু সাজের দ্বারাই যাকে সুন্দর দেখাচ্ছে তার পক্ষে বেণী-সংহারের মত এমন দুর্ঘটনা আর কিছু হ’তে পারে না। মেয়েরা সৌন্দর্য সম্বন্ধে কোন পুঁথি পড়ে না অথচ তাদের হাতে দেখি সাজাবার ও দেখাবার সুন্দর এবং আশ্চর্য কৌশল সমস্ত কেমন করে’ এসে গেছে আপনা হ’তেই।
সব সুন্দর কাল রচয়িতা আপনাকে গোপন রাখে, অসুন্দর সে নিজেই এগিয়ে আসে। ফুল কতখানি সুন্দর হ’য়ে ফোটে তা সে নিজেই জানে না, প্রজাপতি জানে না যে কতখানি সুন্দর তার গতাগতি, শামুক জানে না যে তাজমহলের চেয়ে আশ্চর্য সুন্দর সমাধি গড়ে’ যাচ্ছে সে! যে কাজে রচয়িতা ‘কেমনটা বানিয়েছি’ এই টুকুই প্রকাশ করে’ গেল সে কায অসুন্দর হ’ল—এর নিদর্শন আমাদের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সেখানে প্রত্যেক পাথর কি কৌশলে একের পর আর স্তূপাকার করে’ তোলা হয়েছে এইটেই দেখা যায়। কারিগর তার তোড়জোড় নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে বুক ফুলিয়ে, কিন্তু তাজমহল সেখানে কারিগর কেমন করে’ পাথরগুলো কোন্ কোন্ খানে জুড়েছে তার হিসেবটিও