যতটা সম্ভব মুছে দিয়ে তার সৃষ্টিটাকে এগিয়ে আসতে দিয়েছে সামনে। কাযের থেকে এতখানি আপনাকে লোপ করে’ দিতে যে না পারলে সে অসুন্দর কায করলে। বাড়ীর কর্তা যেখানে অভ্যাগতকে আসন দিলে না, নিজেই গট হ’য়ে জায়গা জুড়ে বসলো, সেখানে উৎসব তার পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে দেখা দিলে না। এই ভাবের অপূর্ণতা ভারি বিশ্রী জিনিষ। বিয়ের রাতে বর-কনেকে উত্তম আসন দিয়ে গুরুজনেরাও নিম্ন আসনে বসেন, সুন্দর রসের নায়ক নায়িকার স্থান অধিকার করে বলেই তারা দুটিতে বরেণ্যদেরও বরেণ্য হ’য়ে বর্তমান হয় সে রাতে।
বিশ্বের তাবৎ জিনিষের সংস্থানের মধ্যে এই উত্তমাধম বিচারের নিদর্শন স্পষ্ট ধরা যায়। যে আলো দেবে তার স্থান হ’ল উচ্চে, যে সেই আলো পেয়ে সুন্দর হবে তার স্থান হ’ল নীচে। সকল দেশের রঙ্গমঞ্চ থেকে ফুটলাইট এখন উঠে যাচ্ছে যে তার একটা কারণ নীচের আলোতে অভিনেতাদের মুখ ভারি অসুন্দর ঠেকে, সত্যই চোখে পীড়া দেয় ও সৌন্দর্যহানি ঘটায়। তাই আলোককে উত্তম স্থান দিতে চাচ্ছেন অভিনেতারা। প্রকৃতির দৃশ্যের মধ্যে এই উত্তমাধম ইত্যাদির সম্বন্ধে বিচারের ভুল দু’ এক জায়গায় ঘটতে দেখা যায়। সূর্য যখন আপনাকে খুব অনেকখানি সরিয়ে রেখে জল স্থল আলোকিত করছেন তখন বিশ্বরচনা একটা অপরূপ সৌন্দর্য ও সুষমা নিয়ে চোখে পড়ছে, কিন্তু নদীর জলে সূর্য যখন নিজেকেই প্রখরতর করে’ ফোটাচ্ছেন তখন চক্ষের পীড়া উৎপাদন করছেন তিনি। চাঁদ সুন্দর আলো ফেলতে জানে জলে স্থলে বলেই কখনো এমন ভুলটা করে না। প্রদীপের আলো তারার আলো এরা জানে নিজেদের অপ্রধান রেখে আলো দেওয়ার রহস্য, বিদ্যুতের আলো যাকে মানুষ ঘরে আনলে সে এ রহস্য জানে না, চক্ষের পীড়া দেখতে দেখতে জন্মিয়ে দেয়—কাযেই সেই অসুন্দর আলোকে সুন্দর দেখবার জন্যে মানুষ তার উপরে নানা রকম ঘোমটা পরিয়ে দিয়ে চলেছে। বাজারের ছবিগুলির রং চং ও কায়দা কানুন ছবিটাকে পিছনে ঠেলে ফেলে এগিয়ে আসে, সেই কারণে আর্টিষ্টের কাছে ভারি অসুন্দর ঠেকে সেগুলো, কালোয়াতি আসলে গান সুর ইত্যাদিকে ঠেলে কালোয়াতটিকেই ঘাড়ের উপরে ঠেলে দেবার চেষ্টা করে, সেই জন্যেই তা অসুন্দর। পাতাটি ফুলটি গাছ থেকে খসে’