পড়েছে,—তারা নিজেদের পড়ার ছন্দটি বাতাসের ছন্দে লুকিয়ে রেখে পড়ছে, তাই সুন্দর ঠেকে তাদের গতি। গাছের তাল বাতাস ছিঁড়ে’ ধুপ করে’ পড়ে’ জানাচ্ছে ‘আমি পড়লেম’, তাই ভারি অসুন্দর ও বেতালা তার ছন্দ। জলের মধ্যে ঢিলটা পড়লো, ঢিলটার কেউ খোঁজ রাখে না, কি সুন্দর ছন্দে জল দুলে’ চল্লো তাই দেখে লোকে। বায়স্কোপের মধ্য দিয়ে ফুল ফোটার ফুলের ঘুমের ফুলের জাগরণের ছবি দেখেছি— ভারি বিস্ময়কর দৃশ্য—কি সহজে প্রত্যেক পাপড়ি একটির পর একটি খুল্লো, বন্ধ হ’ল, কত সহজে শিকড়গুলো দৌড়ে চল্লো জলের সন্ধানে, সুন্দরী নর্তকীর মতো চমৎকার তার হাব ভাব, সবই ভাল লাগলো, কিন্তু আসল ফুল ফোটানোর বেলায় ঝরাণোর বেলায় সেগুলো গোপন রইলো। সেই চলাচল ও কৌশলগুলোই বেশী করে’ পড়লো বায়স্কোপের মধ্য দিয়ে চোখে,কাযেই আর্ট হিসেবে অসুন্দর ঠেকলো সমস্তটি আমার কাছে।
বিশ্ব-রচনার মধ্যে দেখতে পাই সুন্দর আছে অসুন্দরও আছে— ওদিকে কাকচক্ষু নির্মল জল, এদিকে পানা পুকুর। মানুষ এ দুটোকে আলাদা করে’ দেখে বলেই তুলনায় দেখে একটা সুন্দর অন্যটা অসুন্দর, কিন্তু বিশ্ব-রচয়িতা এ দুটিকেই সৌন্দর্য ফোটানোর কাযে লাগাচ্ছেন। রূপদক্ষদের কারবার দেখি সুন্দর অসুন্দর দুইকে নিয়ে। গত বছরের গ্রহণের দিনে শান্তিনিকেতনের পূর্ণিমা উৎসব ফেলে’ একা চলে আসছি, রসিকের হাত ধরে’ সুন্দরের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটলো না মনে এই দুঃখ বাজছে সারা পথ, কিন্তু যিনি কবিরও কবি তিনি হঠাৎ এক সময়ে রেলের ধারে ধারে যতগুলি খানা ডোবা ছিল সবাইকে চাঁদের আলোর সাড়ি পরিয়ে আমার চোখের সামনে উপস্থিত করলেন। এই বিস্ময়কর ঘটনা অসুন্দরকে কেমন করে’ সুন্দর করে’ তুলতে হয় তা আমাকে এক মুহূর্তে শিখিয়ে গেল। তারপর দেখলেম আর্টিষ্ট তিনি চাঁদের মুখের সমস্ত আলো মুছে নিলেন, ধরিত্রীর আঁধার-করা ঘরে দেখলেম তাঁর কত কালের হারানো কন্যা ফিরে এল, সূর্যের দেওয়া আলোময় সাজ ছেড়ে শ্যামাঙ্গিনী সেই ঘরের মেয়েটির দিকে চুপ করে’ অন্ধকারে চেয়ে রয়েছেন দেখলেম আমাদের জননী যিনি তিনি। সুন্দর-অসুন্দরে রাসলীলার এই মুহূর্ত গুলি কি অপূর্ব স্বাদই রেখে গেল মনে।