জাতি ও শিল্প
সব মানুষ এক রকমের নয়। এক এক জাত এক রকমে খাচ্ছে পরছে চলছে এবং ভাবছেও। এক এক জাতির বাইরের চালচোল রকম-সকম এবং জাতির অন্তরের ভাবনা-চিন্তা—এই দুয়ের যোগে উৎপন্ন হ’ল শিল্পের মধ্যে দেশীয়তা, জাতীয়তা। নানা ছন্দে লেখা নানা ভঙ্গিমায় গড়া অন্তরে বাইরে একে অন্যে যে ভিন্নতা তারি ফলে আসে শিল্প, আর তা একভাবে এক ভঙ্গিতে চলে’ আসে জাতিগত সংস্কারগত ঐক্য থেকে। যখন জগতের মধ্যে মানুষগুলি বালুকণার মতো স্বতন্ত্র দলে ধরা সেখানে জাতীয় শিল্প নেই কিন্তু একের শিল্প আছে, ভিন্ন ভিন্ন রকমের শিল্পও আছে। মাঠের মধ্যে একটা গাছ রইলো, মাঠের শেষে একটা গাছ রইলো, এইভাবে যখন সমস্ত অরণ্যটা ছড়িয়ে রইলো দিক্বিদিকে তখন গাছগুলি তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের রূপ ও রূপের ছায়া স্বতন্ত্রভাবে গেল ধরে’, যখন এক হ’য়ে একটা দেশ জুড়ে’ দাঁড়ালো তখন আর এ গাছের সঙ্গে ও গাছের রূপ ও রূপের ছায়ায় যে ভিন্নতা তা ধরা গেল না। তেমনি একের শিল্পে অন্যের শিল্পে এক জাতির ভাবনায় অন্য জাতির ভাবনায় এবং একের আচারে অন্যের ব্যবহারে এই ভাবে একতা ও ভিন্নতা দেখা দিলে যখন, তখন প্রথা রীতি ইত্যাদির বিভিন্নতা ও একতা দেখে বলা চল্লো এটি ভারতীয় এটি ইউরোপীয় সেটি চীনের অন্যটি জাপানের। এই যে শিল্পের মোটামুটি জাতি-বিভাগ দেশ কাল পাত্র ভেদে ঘটেছে, সেইদিক দিয়ে শিল্পচর্চা করে’ দেখার মানে হ’ল শিল্পের সঙ্গে ইতিহাস পুরাতত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে একেবারে বাইরে বাইরে পরিচয়। আর এক দিক দিয়ে পরিচয়—সে হ’ল রসের দিক দিয়ে, সেখানে জাতি-বিভাগ ঐতিহাসিক রহস্য ইত্যাদি না হ’লেও কায চলে’ যায়।
এক দেশের মানুষে অন্য দেশের মানুষে যেমন একদিক দিয়ে স্বতন্ত্র, তেমনি অন্যদিক দিয়ে এক। সঙ্গীতের চাল দেশ কাল পাত্র ভেদে ভিন্ন কিন্তু সঙ্গীতের প্রাণ যেটি সুরের দোলায় দুলছে সেখানে ভেদাভেদ নেই। কালানুগত প্রথা আচার বিচার ধরে’ সৃষ্টি হয় চালচোলের— যেমন বাংলা কীর্তন এবং পশ্চিমের ওস্তাদী গান। এখানে চাল দুটোকে