মূলকথা হচ্ছে রসের তৃষ্ণা; শিল্পের ইচ্ছা হলো কি না, উপযুক্ত আয়োজন হলো কিনা—শিল্পের জন্যে বা রসের তৃষ্ণা মেটাবার জন্যে—এটা একেবারেই ভাববার বিষয় নয়। বিশ্ব জুড়ে তৃষ্ণা মেটাবার শিল্পকার্য, তার প্রয়োগবিদ্যা, তার খুঁটিনাটি উপদেশ আইন-কানুন সমস্তই এমন অপর্যাপ্তভাবে প্রস্তুত রয়েছে যে কোন মানুষের সাধ্য নেই তেমন আয়োজন করে তোলে। শিল্পকে, রসকে পাওয়ার জন্যে আয়োজনের এতটুকু অভাব যে আছে তা খুব একেবারে আদিম অবস্থাতে—আর সব দিক দিয়ে অসহায় অবস্থাতেও—মানুষ বলেনি; উল্টে বরং প্রয়োজন হলে আয়োজনের অভাব ঘটে না কোনদিন—এইটেই তারা, হরিণের শিং, মাছের কাঁটার বাটালি, একটুখানি পাথরের ছুরি, এক টুকরো গেরি মাটি, এই সব দিয়ে নানা কারুকার্য নানা শিল্প রচনা করে দিয়ে সপ্রমাণ করে গেছে। এ না হলে হবে না, ও না হলে চলে না—শিল্পের দিক দিয়ে এ কথা বলে শুধু সে, যার শিল্প না হলেও জীবনটা চলছে কোন রকমে। আদিম শিল্পীর সামনে শুধু তো বিশ্বজোড়া এই রস-ভাণ্ডার খোলা ছিল, চেয়ারও ছিল না, টেবিলও ছিল না, ডিগ্রীও নয়, ডিপ্লোমাও নয়, এমন কি তার জাতীয় শিল্পের গ্যালারী পর্যন্ত নয়—কি উপায়ে তবে সে শিল্পকে অধিকার করলে? আমি অঙ্কন করছি, আমার নাতিটি পাশের ঘরে বসে অঙ্ক কসছে—এইভাবে চলছে, হঠাৎ একদিন নাতি এসে বল্লেন—দাদামশায়, বেরাল না থাকলে তোমার মুস্কিল হতো, বেরালের রোঁয়ার তুলি হতো না তোমার ছবিও হতো না। তর্ক সুরু হলো। ঘোড়ার লেজ কেটে তুলি হতো। ঘোড়া যদি না থাকতো? পাখীর পালক ছিঁড়ে নিতেম। পাখী না পেলে? নিজের মাথার চুল ছিঁড়তেম। টাক পড়ে গেছে? নাতির গালে আঙ্গুলের ডগার খোঁচা দিয়ে বল্লেম—দশটা আঙ্গুলের এই একটা নিয়ে। নাতি রাবণ বধের উপক্রম করেন দেখে বল্লেম—তা হয় না, দেখছো এই ভোঁতা তুলি! বলে আমিও ঘুঁসি ওঠালেম। দাদামশায়ের আয়োজন দেখে নাতি হার মেনে সরে পড়লেন।
কাজের ঘানিতে জোতা রয়েছি, ঘানি পিষছি, কিন্তু স্নেহরস যা বার করছি, এক ফোঁটাও তো আমার কাছে আসছে না। রসালাপের অবসরটুকু নেই, রসের তৃষ্ণা মেটানো, শিল্পলাভ—এ সব তো পরের কথা।