বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অরূপ না রূপ
২৪১

কাছে পৌঁছে দিতে রূপ এবং আর্ট যেন আমাদের সোপান। রূপ সিঁড়িও নয় প্রহরীও নয় আর্ট exhibition এর, যে তাকে ধরে’ আর্টিষ্টের সঙ্গে পরিচয় করতে চলবে, বা অরূপ অদ্ভুত একটা বাজি দেখবে তার কাছে ছাড়পত্র নিয়ে!

 মাধুরী দিয়ে রূপের সাগর ভাসিয়ে নিতে তলিয়ে নিতেই রূপ আছে, রূপ আছে আর্টিষ্টের কথা অরূপের ধ্যান ভুলিয়ে দিতেই। সুরূপাদের শিরোমণি তাজবিবি সে মিলিয়ে গেল রাতের অন্ধকারে, কিন্তু তার রূপ সে এসে বল্লে, ‘এই রইলেম আমি রূপের স্বপ্নে বাঁধা এই পাথরের ভিতরে বাহিরে সুপ্রত্যক্ষ, অরূপে মিলালো না রূপ আমার, রূপের সঙ্গে মিল্লো এসে আমার নতুন রূপ।’ তাজমহলের দর্শন শিল্পীর নাম ও পরিচয় বা ইতিহাসের এক অধ্যায় পড়ে’ নেওয়াতে তো নয়, তাজমহলের রূপের মাধুরী পাওয়াই হচ্ছে দেখার শেষ। রূপ থেকে মাধুরীকে পেয়ে যাওয়াতে রূপের এবং রূপদক্ষের সার্থকতা। দেহতত্ত্ব আধ্যাত্মিকতত্ত্ব এমনি শক্ত রকমের একটা তত্ত্ব পেয়ে রূপ বা রূপদক্ষ ধন্য হয় না কোন কালে।

 বর-কনের বিয়ের দিনে অনেকগুলো লোক থাকে যারা কেউ ‘তত্ত্ব’ বয়, কেউ শাস্ত্র কয়, কেউ বর কনের দাম কত যাচাই করে, এমনি নানা ঘটনা নিয়ে উৎসব একটা রূপ পেয়ে বসে সবারই কাছে। কিন্তু উৎসবের মাধুরিমা পেয়ে যায় শুধু দুটি তিনটি লোক—বর-কনে কনের মা এমনি দুচার অন্তরঙ্গ, যারা হাসে কাঁদে এক সঙ্গে।

 বিশ্বজোড়া রূপ মাধুরী-সাগরে টলমল করছে,—বাতাসে মাধুরী, সাগরজলে মাধুরী, আকাশে মাধুরী, ধরিত্রী মাধুরী বহন করছে, অরণ্যে মাধুরী, পথের ধূলা তাতেও মাধুরী। এত মাধুরী ধরা রইলো দশ দিকে কিন্তু এর উপভোগের উপযুক্ত হ’ল না মানুষ ছাড়া আর কোন জীব। এই যে শ্রেষ্ঠ দান কবির কবি রচয়িতার রচয়িতা আর্টিষ্টেরও আর্টিষ্টের কাছ থেকে এল, একে পেয়ে মানুষ পরিতৃপ্ত হবে, না এতে খুসি হ’য়ে দাতারই কথা স্মরণ করবে—এই ভাবনা হিমালয়ে বসে’ আমার মনে উঠেছিল। আমার দেবতাকে আমি প্রশ্ন করেছিলেম, দান দেখেই যে ভুলে’ থাকি তোমায়, দেখতে চোখও চায় না মনও চায় না—এ কেমন দান তোমার!