পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরূপ না রূপ ૨86 ধরফের পাহাড় দেখা পাহাড়কে সত্য দেখা বলে’ তো মনে হয় না। একটা সমুদ্রের তরঙ্গ ঘোড়া হিসেবে দেখে কবিদের আনন্দ হয়, কেননা কবি ভাবুক কিন্তু আর্টিষ্ট তিনি যে রূপদক্ষ। দেশলাইয়ের বাক্স একটা, সিগারেটের টিন একটা, লোহার সিন্দুক একটা এবং কালীঘাটের কৌটা একটা--এদের ভাল-মন্দের হিসেব এদের রূপের মধ্যেই রয়েছে। দেশলাইয়ের বাক্সর কবি বাক্সটার রূপ বড় উপমার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে হয়তে কালীঘাটের কোটোর চেয়ে তাকে ভাল বলে’ প্রমাণ করতে পারেন কারো কাছে, কিন্তু আটিষ্ট রূপ দিয়েই রূপের পরিমাপ করে দেখবে, উপমার ভাল-মন্দ দিয়ে নয় । কি প্রাচীন কি আধুনিক ভারত-শিল্পের একটা রূপ আছে, শুধু তাই দিয়েই তার ভাল-মন্দ উচ্চ-নীচ বিচার । আধ্যাত্মিকতার প্রশংসাপত্রের উপরে তাকে বসালে সে যে জগং শিল্পে বড় জিনিষ বলে চলে’ যাবে একথা ভাবাই ভুল। গুণের অপেক্ষ না রেখেই রূপবান সহজেই প্রমাণ করে যে সে রূপবান । অষ্টাবক্র তিনি ঋষি তয়েও একটা ছেলের কাছে ধরা পড়লেন যে তিনি রূপবান একেবারেই নন, নির্দোষীকে কিন্তু তিনি অভিসম্পাত দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন তিনি বড় ঋষি । ইন্দুমতীকে নিয়ে সহচরী সুনন্দ এক এক রাজার রূপগুণের বর্ণনা কত ব্যাখ্যান দিতে দিতে চল্লো, মালা পড়লে না কারু গলায়। আজ রাজার সামনে এসে সুনন্দ। শুধু বল্লো, ‘আর্য্যে ব্ৰজমোeন্তত:’ । আজ রাজা যে রূপবান ছিলেন সুতরাং সেখানে সুনন্দার ব্যাখ্যানার প্রয়োজন একেবারেই রইলো না। রূপের পর্যাপ্তির মধ্যে রূপের একটু আধটু খুৎ যেমন, তেমনি গুণেরও বাহুল্যের মধ্যে কুরূপের সবটা তলিয়ে যায়। পয়সার পর্যাপ্তি রূপ গুণ সবার দোষ ফিলটার করে’ পাত্রটিকে বিয়ের সভায় হাজির করে, কিন্তু তাই বলে’ কালো কোন দিন সাদা হয় না, যা কুরূপ তা অরূপের ছাড়পত্র পেয়েও স্বরূপ হয় না । অনেক সময় দেখি কুরূপ সেও স’য়ে গেছে চোখে । যেমন দেখতে দেখতে স'য়ে গেলে রূপের খুৎ চোখেই পড়ে না, তেমনি রূপ অনেক সময়ে অতিপরিচিত হ’য়ে মর্যাদাও হারায় আমাদের কাছে । হিমালয় পর্বত তার দিকে ফিরেও দেখে না পাহাড়ি মানুষ, আর তিন মাস ধরে’ প্রতি মুহূর্তে তার দিকে চেয়ে চেয়ে চোখ আমার তৃপ্তি আর মানলো না ।