পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরূপ না রূপ २8१ মুরের টান কানের কাছে দিয়ে এক একটা রূপ জাগালে, সকাল বিকাল কত-কি’র কবিতার ব্যঞ্জন স্বরের রঙের রেখার রেশ দিয়ে যা বলতে পারলে না দেখাতে পারলে না, তা দেখালে শোনালে । ইসারায় বলা হ’ল যা তাকে আর যাই বলি অরূপ বল্পে ভুল হয়। এক রূপ আর এক রূপের, এক রঙ আর এক রঙের, এক স্বর অন্য কিছুর ইঙ্গিত করলে-এ পর্যন্ত চলে আর্টে, বেরঙ দিয়ে বোঝানো চলে বাদলা, কিন্তু বেরঙ দিয়ে রঙ, বিনা রেখার ছবি এ সব তত্ত্বকথার কথা । পর্বতে বসে’ রূপ-অরূপ দুয়েরই হিসেব দিয়ে ছবি দেখে আমি অনেকগুলো নোট খাতায় টুকে এনেছি, তাই নিয়ে এ সমস্যাটা আর একটু পরিষ্কার করবার চেষ্টা করবে। “সকালে ফোটা সূর্যমুখী ফুলটিকে নীল আকাশ আলোর খবর এনে দিতে না দিতেই প্রথম পৌষের দুরন্ত কুয়াস দিক বিদিক ঘিরে নিলে।” কিংবা যেমন—“পাহাড় তলিয়ে যাচ্ছে হিমের প্লাবনে, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সকালের আলো--কুল-হারানো একলা ঠাস।” অথবা যেমন—“সন্ধ্যার আকাশ চেয়ে দেখছে দিনের শেষে আলোর জয়পতাকা শীতের কুয়াস নামিয়ে রাখছে ফুলের বনের পায়ের কাছটিতে।” তিনটি ছোট ছোট স্থান, চিত্রও নয় কবিতাও নয় গল্পও নয় । হাতের লেখায় ধরা দিলে ছবি কটা সহজে কিন্তু তুলির আগায় এদের আটকাতে গেলে দেখবো—দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ছটিই ছবি হ’য়ে রূপ পেয়ে বসে আছে কিন্তু প্রথমটির বেলায় মুস্কিল, সেখানে রূপ সাদা কাগজ থেকে পিছলে পড়তে চায়, ঘন কুয়াস পটের সবটা অধিকার করতে চায়। বাদলের আকাশ যেমন শুধু রঙ দিয়ে জানায় জলের ধারা আছে তার বুকে, তেমনি এখানে কুয়াস না-দেখা ফুল পাতা ইত্যাদি রূপের পরিমল বহন করে’ সার্থক একখানি ছবি হ’তে চাইলে । সাদা রঙের একটা প্রলেপ দিয়ে পাহাড় পর্বত ফুল পাতা সব ধরে দেওয়া পটের উপরে—এ মামুষের কর্ম নয়। ছবি করতে হ’লেই তাকে হয় রূপ নয় রূপের আভাসের মধ্যে বদ্ধ থাকতে হবেই। পর্বতের আভাস না দিয়ে পর্বতের কুয়াসার ঠিক রূপ এবং মাঠের আভাস না দিয়ে পাহাড়তলার কুয়াসার ঠিক রূপ দেওয়া বিশ্বকমার কায, মানুষের ক্ষমতায় কুলোয় না । রূপ যতটুকুই হ’ক না কেন সে রূপ ছাড়া অরূপ নয়। জলের মতো হাঙ্কা রঙ দিয়ে পাহাড় লিখি, গাছ লিখি, কুয়াসায় গাছ পাহাড়