পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৫০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

করছে একই ছন্দে মুরে । তেমনি ইট পাথর ও কাঠের পাহাড় নগরের কোথায়ও রস নেই এটা মনে করলে অট্টালিকার অরণ্য আর পাহাড়ের ঝাউবন দুই-ই রহস্যময় ছবি দেখায়। পাহাড়ের বসতি আর আমার ঘরের পাশে সিংহির বাগানের বস্তি—রুপ হিসেবে কোনটা বড় কোনট; ছোট বলা শক্ত, রঙ আর স্বর পেয়ে দুটোই মধুর লাগে চোখে । ঘরের মধ্যে এতটুকু টিপ পর কালে মেয়েটি আর পর্বতের উপরকার অরণ্যের কোলে সন্ধ্যাতারা—দুজনেই সমান রূপবতী, দুজনেই প্রত্যক্ষ রূপ নিয়ে মধুর, অপ্রত্যক্ষের ইঙ্গিত না দিয়েও মধুর—এটা অস্বীকার করা তো যায় না। আবার পাটের সাড়ির মধ্যে ঘোমটা-টানা সহরে নববধূ এবং পূণ চন্দ্রিমার আলোর ঘোমটা-টানা পাহাড়ের কোলে চা-গাছের নতুন ফোট ফুলের আড়ালে না-দেখা ঝরণা—দুজনের নুপুর-ধ্বনি মধুর হয়ে শুধু কালে বাজে না, প্রাণেও যে বাজে । নগর তার এবং নগরবাসীর স্বভাবের অনুরূপ রূপটি যখন দিলে তখন সেটি স্বাভাবিক ছবি হ'ল। স্বভাবৰ্দ্দশ্য কথার অর্থই থাকে ন যদি আর্টিষ্টের নিজের ভাব দৃশ্বের মধ্যে অনুরূপ রূপটি লাভ করেছে—এটা ছবি প্রমাণ না করে । ভারতবাসীর পক্ষে যেটা স্বাভাবিক লগুনবাসীর পক্ষে তা স্বাভাবিক মোটেই নয়, কিন্তু তাই বলে ভারতীয় ছবি অস্বাভাবিক রূপ সমস্ত নিয়ে কারবার করলে এটা বলা বিষম ভুল। বানরের ডান স্বাভাবিক নয়, বাছুড়ের ডান স্বাভাবিক—এ তর্ক করে বানরকে বাছুড়ের চেয়ে কম স্বাভাবিক বলে’ উড়িয়ে দেওয়া চলে না । রূপ যখন স্বভাবের নিয়ম ধরে ফুট অফুট দুই সীমা মেনে চল্লো, মুর যেখানে স্বাভাবিক, চল বলা সমস্তই যেখানে স্বাভাবিক ছন্দ পেলে সেইখানেই মাধুরী ফুটলো, এর বিপরীতে বিশ্ৰী কাণ্ড হ’ল। আমার পক্ষে ভারত-শিল্প স্বাভাবিক, ইংরেজের পক্ষে নয়। নুপুর পায়ের ছন্দে মধুর বাজে, পোষা কুকুর যখন সেটাকে নিয়ে টানা হেঁচড়া করে তখন বিরক্তি উৎপাদন ছাড়া আর কিছু করে না । আলোককে অন্ধকারের সঙ্গে পৃথক করে দেখা চলে না, প্রত্যক্ষ রূপকে অপ্রত্যক্ষ রূপের সঙ্গে পৃথক করেও দেখা চলে না। একের সঙ্গে অন্তের ঠিক যোগাযোগ না করতে পারলে ছবিও হয় না, সাদা পাথরে কাল পাথরে সাদা কাগজে কালে কাগজে যারা কিছু রচনা করে তারাই