পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

বারো মাসে তেরো পার্বণ ছিল, সে জন্যে সেকালে কাজেরও কামাই হয়নি, জীবনেরও কমতি ছিল না,—শিল্পেরও নয়, শিল্পীরও নয়, রসেরও নয়, রসিকেরও নয়। “অলসস্‌স কুতো শিপ্পং?” নিশ্চয় আমাদের এখনকার জীবন যাত্রায় কোথাও একটা কল বিগড়েছে যাতে করে জীবনটা বিশ্রী রকম খুঁড়িয়ে চলছে, শরীর খেটে মরছে কিন্তু মনটা পড়ে আছে অবশ, অলস! ম্যালেরিয়ার মশার সঙ্গে লক্ষ্মী পেঁচার ঝাঁক এসে যদি আমাদের ঘরে বাসা বাঁধতো, তবে শিল্পী হওয়া আমাদের পক্ষে সহজ হতো কি না এ প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করা আমার শোভা পায় না—পেঁচার পালকের গদীর উপর বসে। কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষ্য তো মানতে হয়। শিল্পী ‘যা ছুঁয়ে দেয় তাই সোণা হয়ে যায়’ অথচ সোণা দিয়ে বেচারা ছেলে মেয়ের গা কোনদিন ভরে দিতে পারলে না! তাজের পাথর যারা পালিস করলে—আয়নার মতো ঝকঝকে, দুধের মতো সাদা করে, মুক্তোর চেয়েও লাবণ্য দিয়ে তার গম্বুজটা গড়ে গেল যারা, দেওয়ালের গায়ে অমর দেশের পারিজাত লতা চড়িয়ে দিয়ে গেল যে নিপুণ সব মালি, তারা রোজ-মজুরী কত পেয়েছিল? তা ছাড়া পুরো খেতে পায়নি বলে তাদের শিল্প কোথায় ম্লান হয়েছিল বল্‌তে পারো? দশ-এগার বছর লেগেছিলো তাজটা শেষ করতে; সবচেয়ে বেশী মাইনা যা দেওয়া হয়েছিল ওস্তাদদের, তা মাসে হাজার টাকার বেশী নয়; এই থেকে বাদসাহি আমলের উপরওয়ালাদের পেট ভরিয়ে কারিগরেরা রোজ পেয়েছিল কত, কষে দেখলেই ধরা পড়বে শিল্পীর সঙ্গে ও শিল্পের সঙ্গে সম্পদের যোগাযোগটা। শিল্পী হওয়া না হওয়ার সঙ্গে ম্যালেরিয়া হওয়ার বেশী যোগ, চাকরী হওয়া না হওয়ার চেয়ে—আমি এইটেই দেখতে পাচ্ছি। জীবন রক্ষা করতে যেটা দরকার, জীবন সেটা ঘাড় ধরে আমাদের করিয়ে নেবেই, ছাড়বে না,—নিদারুণ তার পেষণ-পীড়ন। অতএব আফিস আদালত ছেড়ে সকলে রূপ ও রসের রাজত্বের দিকে সন্ন্যাস নিয়ে চট্‌পট্‌ বেরিয়ে পড়ার কুপরামর্শ তো কাউকে দেওয়া চলে না; অথচ দেখি এই কলে-পড়া জীবন যাত্রার মধ্যে একটুখানি রস একটু শিল্প সৌন্দর্য না ঢোকাতে পারলেও তো বাঁচিনে। শুধু যে প্রাণ যায় তা নয়, শিল্পী বলে ভারতবাসীর যে মান ছিল তাও যায়। শিল্পী নীচ