পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৫৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

না। শুধু এই নয়, মানুষ নিজের এক কালের খেলার সব খেলেও আবা? সেই খেলার রস পেতে চল্লে। —নতুন নতুন উপায়ে নয়, সেই সব পুরোনে উপায়েই । সেই বঁাশী আজকে বাজছে নতুন সুরে, সেই তুলি আজ লিখছে নতুন কথা, সেই লোহার তার-তারি মুর বাজছে কিন্তু আজকের সুরে । আদি যুগের মানুষ তার হরিণ যেমন করে আঁকতে হয় তা একে গেল, কিন্তু আজকের মানুষ তেমনিভাবেই হরিণ গাছ আরো কত কি নিয়ে নিজের খেলা খেলতে লাগলো ! কালোয়াত যেমন গাইতে হয় গেয়ে গেল, নট নটী তারা যেমন করে নাচতে হয় নেচে গেল, কিন্তু ও সব হ’য়ে গেছে এখন স্থির হয়ে বসে থাক মৌনী বাবা হয়ে কিংবা ‘আগের যা তাই পুনরাবৃত্তি করা যাক’—এ তে বল্পে না মানুষ । হঠাৎ মনে হয় এই যে ছবি মূর্তি কবিতা গান নাট্য নৃত্য এসব মানুষের ছেলেমানুষির মতে, মানুষের একটা নেশার মতে । কোন কোন পণ্ডিত তাবৎ রূপবিদ্যা এই ছেলেখেলার ভিতে দাড় করিয়ে আর্টকে দেখতে চলেছেন এবং একদল মানুষও এদেশে আজকাল দেখি র্যার নেশা এবং খেলার কোঠায় রূপষিদ্যাকে ফেলে এসব থেকে মানুষকে নিরস্ত করতে চাচ্ছেন। ছবি লেখার বিষয়ে একদিন মুসলমান ধর্মে কঠিন শাসন ছিল, মানুষ-লেখার বিরুদ্ধে আমাদের শাস্ত্র শুধু নয় দলে দলে মানুষের নিজের মনেও একটা বিষম ভয় এক এক সময়ে উদিত হয়েছিল। রূপ-বৈরাগ্য রস-বৈরাগ্য এরও প্রমাণ যুগে যুগে দিয়েছে মানুষের ইতিহাস, কিন্তু রূপবিদ্যাকে তো মানুষ ছাড়তে পারলে ন। এ পর্যন্ত । যদি এসব সত্যিই ছেলেখেলা হ’ত তবে লোকের ধমকানির চোটে নয়তে আপনা হতেই এ সব খেলা কোন কালে বন্ধ হ’ত! ছেলেখেলায় ছেলের অরুচি হয়—সে আজ খেলে ফুটবল, কাল খেলে হাডু-ডু-ডু ; বয়স হ’লে দেখি অনেক ছেলে খেলতেই চায় না, এমন কি ফুটবল খেলতেও তার অরুচি হয়, কিন্তু কতক ছেলে সত্যি ফুটবল খেলছে তো বটে। ছেলে শেলেটে ছবি লেখে, মাষ্টারের তাড়ায় আঁকা বন্ধ করে আক কসতে লেগে যায় এবং অঙ্কবিদ্যায় পণ্ডিত হ’য়ে যায়— তখন অঁাকাকে ছেলেখেলা বলেই ভাবে সে । এই যে সমস্ত রূপ নিয়ে ব্যাপার এ যে খেলা নয়, লীলা মানুষের—এ বল্লেও তখন সে চটে ওঠে। এই দুই রকমের ঘটনা যে মানুষে নেই তা বলিনে কিন্তু মানুষের লীলার ইতিহাস যুগে যুগে সাক্ষ্য দিচ্ছে—মানুষ প্রথম থেকেই এই রূপষিদ্যাকে