পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৬২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

দেওয়া ভাবে থাকে। হঠাৎ কোন দেশে একদিন একজন প্রতিভাবান এল,—হয়তো ছিল সে নিউটনের মতোই বালক মাত্র, হয়তো বা ছিল সুলেমান বাদশার মতো প্রকাণ্ড শক্তিমান—উড়ন্ত পার্থীকে তুলির একটি টানে ছবির আকাশে উড়িয়ে দিয়ে গেল সে । যেমন আলোর কম্পন বিজ্ঞান-জগতে, রূপের জগতে, এই উড়ন্ত পার্থীর ডানার ওঠা-পড় বুঝিয়ে জীবন্ত রেখার একটু কম্পন একটা মস্ত আবিষ্কার,–রেখা প্রাণ পেলে । রত্নাকরের মুখে ফুটি ছত্র শ্লোক প্রতিভার প্রভায় যেদিন ঝলমল করে উঠলো, সাহিত্যে ও কাব্যজগতে সে একটা মহাদিন, ভাষা নতুন ডান মেল্পে আলোর ছন্দে। সঙ্গীতকার তারা চটবেন—যদি বলি গানের সাত স্তর দেবতার কাছ থেকে না এসে মানুষের প্রতিভার কাছ থেকে পাওয়া ; কিন্তু মানুষের ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে তিন পাচ এব: পরে সাত যুগ ধরে একটির পর একটি প্রতিভার আলো এসে ধ্বনিকে বাতাসের ফঁাদে ধরেছে তবে পেয়েছি আমরা সঙ্গীতবিদ্যাকে পূর্ণভাবে । সহজ কথা কিন্তু টকাকারের বোঝানোর চোটে শক্ত হ’য়ে উঠলে, এটা তো সংস্কৃত টীকাগুদ্ধ একটা বই পড়লেই বোঝা যায়। প্রতিভাবান কবি এক ছত্রে সহজে বল্লেন কিছু, ধীশক্তিমান সেটাকে এতখানি করে পেচিয়ে বলে গেলেন । প্রতিভার বিশেষণ হ’ল যেমন ‘সর্বতোমুখী তেমনি ধীশক্তির বেলাতেও নানা বিশেষণ এল সূচ্যগ্র’ ‘সুতীক্ষ’ প্রভৃতি । বালকের প্রতিভা আর বয়স্কের প্রতিভা দুয়ের ভিন্নত কেমন তা বোঝাতে হ’লে প্রদীপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রতিভা জ্বলছে সূচ্যগ্র পলতেটি থেকে আসছে যে বুদ্ধি বা ধী তা নিয়ে ; স্বল্পতৈলের প্রদীপ আর অনেক ভৈলের প্রদীপ, অপরিস্কৃত তৈলের আলো আর সুপরিষ্কৃত তৈলের আলো । নানা দরের আলো নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ঘরে জ্বল্লো প্রতিভা এবং তারি খবর নানা রূপ-রচনায় এবং লীলায় ধরা রইলো । যুগে যুগে মানুষের উৎকর্ষের ইতিহাস এই প্রতিভা ও ধীশক্তির ক্রিয়ার ইতিহাস। প্রতিভার আলো ধরে কোন দেশের মানুষ কোন দিকে কতটা এগোলো তার হিসেব রূপবিদ্যা দখল না হ’লে তো ঠিক ধরা মুস্কিল । কলাবিদ্যার চর্চার আনন্দই যেখানে সেখানে প্রতিভার আলোয় দেখছি মানুষের অন্তর্জগৎ-বহির্জগৎ দুই নতুন নতুন দিকে বিস্তৃতি পাচ্ছে, কর্মজগৎ