পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পে অধিকার
২১

জাত হলেও সে শিল্পের পাণিগ্রহণ করেছে, সেই কারণে সকল সময়ে শিল্পী বিশুদ্ধ এই কথা ভারতবর্ষের ঋষিরা বলে গেছেন; কিন্তু যেখানে এই শিল্পী আজকালের কলের মানুষ আমাদের পরশ পাচ্ছে সেইখানেই সে মলিন হচ্ছে—ফুল যেমন চটকে যায় বেরসিকের হাতে পড়ে। এর উপায় কি?

 রসের সঙ্গে কাজের বন্দীর পরিচয় পরিণয় ঘটাবার কি আশা নেই? কেন থাকবে না? কাজকর্ম আমাদেরই বেঁধে পীড়া দিচ্ছে এবং কবি, শিল্পী, রসিক—এঁরা সব এই কাজের জগতের বাইরে একটা কোন নতুন জগতে এসে বিচরণ করছেন তা তো নয়? কিম্বা জীবন যাত্রার আখ্‌মাড়া কলটার কাছ থেকে চট্‌পট্‌ পালাবার উৎসাহ তো কবি শিল্পী এঁদের কারু বড় একটা দেখা যাচ্ছে না! তাঁরা তবে কি করে বেঁচে রয়েছেন? কবীরের কাজ ছিল সারাদিন তাঁত-বোনা, আফিসে বসে কলম পেশার কিম্বা পাঠশালে বসে পড়া মুখস্তর সঙ্গে তার কমই তফাৎ। তাঁত-বোনা মাকু-ঠেলার কাজ ছাড়লে কবীরের পেট চলা দায় হতো। আমাদের সংসার চালাতে হচ্ছে কলম ঠেলে। রসের সম্পর্ক মাকু-ঠেলার সঙ্গে যত, কলম-ঠেলার সঙ্গেও তত, শুধু কবীর স্বাধীন জীবিকার দ্বারা অর্জন করতেন টাকা, ইচ্ছাসুখে ঠেলতেন মাকু, আনন্দের সঙ্গে কাজ বাজিয়ে চলতেন, আর এখনকার আমরা কাজ বাজিয়ে বাজিয়ে কুঁজো হয়ে পড়লেম তবু কাজি বলছে ঘাড়ে ধরে বাজা, বাজা, আরো কাজ বাজা, না হলে বরখাস্ত। কবীরের তাঁত কবীরকে ‘বরখাস্ত’ এ কথা বলতে পারেনি। ঐ যে কবীরের ইচ্ছাসুখে তাঁত-বোনার রাস্তা তারি ধারে তাঁর কল্পবৃক্ষ ফুল ফুটিয়েছিল। এই ইচ্ছাসুখটুকুর মুক্তি কবি, শিল্পী, গাইয়ে, গুণী সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে—পয়সার সুখ নয়, কিম্বা কাজ ছেড়ে ভরপুর আরামও নয়।

 কাজের-কলের বন্দী আমাদের সব দিক দিয়ে এই ইচ্ছাসুখের পথে যেখানে বাধা সেখানে নরক যন্ত্রণা ভোগ করি, উপায় কি? কিন্তু মন—সে তো এ বাধা মানবার পাত্রই নয়। জেলখানার দরজা মন্ত্র-বলে খুলে সে তো বেরিয়ে যেতে পারে একেবারে নীল আকাশের ওপারে! সে তো মৃত্যুর কবলে পড়েও রচনা করতে পারে অমৃতলোক! তবে কোথায় নিরাশা, কোথায় বাধা? বিক্রমাদিত্যের দরবারে কবি