পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

ধরে বইতে বইতে কি রেখে গেল রঙের কুলে রেখার কুলে কি চিন্তার ছাপ—তাও দেখবে রূপবিদ। পুরাতত্ত্বের বিষয় এক জিনিষ, রূপতত্ত্বের বিষয় অন্ত—এটা বলা ভুল। একই অজস্তার ছবি তার পুরাতত্ত্বও রয়েছে তার রূপতত্ত্বও রয়েছে তার রসতত্ত্বও রয়েছে, সুতরাং বলতে পারি রূপবিদ্যার মধ্যে এ সবারই স্থান আছে। রূপবিদ্যা নানাদিক দিয়ে রূপটির পরিমাপ করতে নিযুক্ত করে মনকে, তাই রূপের অস্তর বাহিরের খবর এত করে” ধরা পড়ে রূপবিদের কাছে। বৃহত্তর ভাবে রূপকে দেখায় বলে রূপবিদ্যার দিক দিয়ে চর্চায় রূপ-রচনা সমস্তের বিস্তৃত ইতিহাস ধরে চলতে হয় শিক্ষার্থীকে । কোনো একটা তত্ত্ব ধরে চল্লে রূপের এক অংশ যেমন তার ঐতিহাসিক অংশ বা তার কোনো এক জাতি বা ধমের সঙ্গে সম্বন্ধের দিক পরিষ্কার হ’য়ে উঠলো, কিন্তু বিশ্বজোড়া রূপ ও রসের রচনা সমস্তের সঙ্গে কি প্রকারের যোগ নিয়ে জিনিষটি রয়েছে মহাকালের মানদণ্ডে তার কি মূল্য নির্ধারিত হ’ল—এর হিসেব রূপবিদ্যার অধিকারীর হাতে । রূপ-রচনা সমস্তকে সর্বাঙ্গীণ ভাবে বুঝতে বা বোঝাতে হলে রূপবিদ্যার দরকার। কোনো একটা রচনার রসতত্ত্ব পেতে হলে অলঙ্কারশাস্ত্রে নানাদিক দিয়ে রচনাটি আলোচনা করে দেখার উপদেশ সমস্ত রয়েছে, তেমনি রূপতত্ত্ব তারও আলোচনার পথ হয়েছিল এ দেশে। রূপতত্ত্ব সম্বন্ধে হেমচন্দ্র বলেছেন— “রূপতত্ত্বং স্যাক্রপং লক্ষণং ভাবশাত্মপ্রকৃতিরীতয়ঃ। সহজে রূপতত্ত্বঞ্চ ধমসর্গোনিসর্গবৎ ॥” —হেমচন্দ্র ললিতবিস্তরে কলাবিদ্যার যে সব হিসেব ধরা গেছে তার মধ্যে ‘রূপ’ম্ এবং ‘রূপকৰ্ম্ম এই দুয়ের কথা বলা হয়েছে। ইউরোপের একজন পণ্ডিত যিনি এই রূপতত্ত্ব ও রূপবিদ্যা নিয়ে বিশেশভাবে আলোচনা করেছেন তিনি শুনেছি আমাদের মেয়েদের হাতের আলপনার যে নক্স। আমি ছাপিয়েছি সেগুলি পেয়ে বলেছেন যে তার দেশের অনেকগুলি ঐ ভাবের নক্স কোথা থেকে কেমন করে উৎপত্তি হ’ল তার ইতিহাসের সন্ধান তিনি পেয়েছেন বাঙলার আলপনা থেকে। এইভাবে দেখি সেকালে এবং একালেও রূপবিদ্যা রূপতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা চলেছে রূপ সমস্তের পরিষ্কার ধারণ পাবার জন্ত ।