পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কালিদাসকেও নিয়মিত হাজ্‌রে লেখাতে হতো, কিন্তু এতে করে মেঘরাজ্যের তপোবনে তাঁর বিচরণের কোন বাধাই তো হয় নি! কবি, শিল্পী কেউ কাজের জগৎ ছেড়ে রসকলির তিলক টেনে অথবা জটাজুটে ছাই-ভস্মে একেবারে রসগঙ্গাধর সেজে কেবলি বৃন্দাবন আর গঙ্গাসাগরের দিকে পালিয়ে চলেছেন, তা তো কোনো ইতিহাস বলে না। মৃত্যু দিয়ে গড়া এই আমি-রসের পেয়ালা, শুকনো চামড়ার কার্বা, যার মধ্যে ধরা হয়েছে গোলাপজল, কাজের সূতোয় গাঁথা পারিজাত ফুল—এইগুলোকে তাঁরা জীবনে অস্বীকার করে চলতে চেষ্ট। করেন নি, উল্টে বরং যারা কাজে নারাজ হয়ে একেবারেই বয়ে যাবার জন্য বেশী আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের ধমক দিয়ে বলেছেন, ‘জ্যোঁ কা ত্যোঁ ঠহরো’—আরে অবুঝ, ঠিক্ যেমন আছ তেমনি স্থির থাক। কথাই রয়েছে—কারুকার্য। কাজের জটিলতার শ্রম, শ্রান্তি সমস্তই মেনে নিলে তবে তো সে শিল্পী। এই সহরের মধ্যে দাঁড়িয়েই কি আমরা বলতে পারি, রস কোথায়—তাকে খুঁজে পাচ্ছিনে, শিল্প কোথায়—তাকে দেখতে পাচ্ছিনে? ইন্দ্রনীল মণির ঢাকনা দিয়ে ঢাকা এই প্রকাণ্ড রসের পেয়ালা, কালো-সাদা, বাঁকা-সোজা, রং-বেরং কারুকার্য দিয়ে নিবিড় করে সাজানো, এটি ধরা রয়েছে—তোমারো সামনে, তারও সামনে, আমারো সামনে, ওরও সামনে—বিশেষ ক’রে কারু জন্যে তো এটা নয়—জায়গা বুঝেও তো এটা রাখা হয়নি—তবে দুঃখ কোনখানে? ঢাকা খোলার বাধা কি? কত শক্ত শক্ত কাজে আমরা এগিয়ে যাই, এই কাজটাই কি খুব কঠিন আর দুঃসাধ্য হলো? ঢাকা খোলার অবসর পেলাম না, এইটেই হলো কি আসল কথা? ধর, অবসর পেলেম—পূর্বপুরুষ খেটে খুটে টাকা জমিয়ে গেল, পেটের ভাবনাও ভাবতে হলো ন,—মেয়ের বিয়েও নয়, চাকরিও নয়, কিম্বা আফিস আদালত ইস্কুলগুলোর সঙ্গে একদম আড়ি ঘোষণা করে লম্বা ছুটি পাওয়া গেল—রসের পেয়ালাটার তলানি পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবার। কিন্তু এতে করে হলো কি? লাড্‌ডুর খদ্দের এত বেড়ে চল্লো যে দিল্লীর বাদশার মেঠাইওয়ালাও ফতুর হবার জোগাড় হলো। অতএব বলতেই হয়, অবসর ও অর্থের মাত্রার তারতম্যে রস পাওয়া-না-পাওয়ার কম-বেশ ঘটছে না, আমার ইচ্ছে না-ইচ্ছে, কি ইচ্ছে, কেমন ইচ্ছে—এরই উপরে সব নির্ভর করছে,