পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৮২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

বন্দী হয়ে। কিন্তু সেই অতকাল পুর্বেও মানুষের কারিগরিকে সার্থক করতে ছ’একজন রূপদক্ষ দেখা দিয়েছিল যাদের হাতের লেখায় রূপ ও রেখা এক হ’য়ে রয়েছে দেখি এক অন্যের ধম পেয়ে,—রূপের কুহকে সেখানে রেখা ভুল্লো, রেখার স্বপ্নে রূপ আপনাকে হারালে । খুব প্রাচীন কালে ঈজিপ্টের ভাস্কর্য থেকে দেখি রেখাকে সত্যিই দুর্গের পরিখার মতো করে কেটে রূপকে তার মধ্যে বদ্ধ করেছে মানুষ। আমাদের তালপাতায় লেখা পুথির ছবি সেখানেও রেখার এই ভাব,— তারের খাচার মতে রেখা ধরে রেখেছে রূপকে। কিন্তু মানুষের মূর্তিশিল্প যেখানে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা পেয়েছে সেখানে দেখি রেখা থেকেও নেই, রূপের হিল্লোলে ভাবের বাতাসে রেখা স্রোতের জলে মালার মতে ভরা পালের বাকটির মতে কখনো রূপের সঙ্গে ওতপ্রোত হ’য়ে রইলো কখনো বা রূপের গরবে ভর্তি হয়ে থাকলো । যেমন রূপটির সঙ্গে রেখা ঠিক ভাবে মেলাতে পারলে রেখা হয় সুন্দরী তেমনি রূপও হয় সুন্দর যখন ঠিক রেখাকে সে পেয়ে যায়। খাতার পাতায় টানা রেখাগুলি রূপ না পেয়ে যেমন ভাবে অাছে তেমনিই যদি থাকে তো আমরা পাতাটাকে বিশ্ৰী বলিনে, রেখাগুলিকেও বিশ্ৰী বলিনে ; সাদা পাতায় সাদাসিধে রেখা তারা দুয়ে মিলে একটা সৌন্দর্য স্থষ্টি করলে—যেমন সাদা সাড়ির কিনারায় কিনারায় পাড়ের টান কিংবা বীণাদণ্ডের উপরে ঝকঝকে গুটিকতক তারের টান। এই ভাবের একাকিনী রেখা সে রইলো যেন না-বাজ বীণা ৷ খাতার রেখাগুলি তার চাইছে অক্ষর-মূর্তিকে পেতে, বীণার তার তার চাইছে স্বর-মূর্তিকে পেতে,—যখন সেই মিলনটি ঘটলে তখন সার্থক হ’ল বীণা এবং খাত দুইই। এ না হয়ে শুধু দৃষ্টিসুখটুকু দিয়ে গেল মাত্র যে সুদৃশ্ব রেখা ও টান সে শুধু চোখের বস্তু ; অলঙ্কারশিল্পে এই সুদৃশ্ব রেখা ব্যবহার করা হয়। স্থশাব্য ছন্দ ও সুর কিছু না বল্লেও যেমন শ্রবণ মাত্রেই তৃপ্তি দেয় তেমনি একটি নিখুৎ সোজা বা সুন্দর বাকা রেখার দ্বারা দর্শনমুখ পাই আমরা । অলঙ্কার দিয়ে মানুষ যখন চোখ ভোলাতে চাচ্ছে তখন চোখে পড়ে এমনই সব রেখা দিয়ে সে রূপকে বাধছে । অলঙ্কার গায়েই পরি বা তা দিয়ে একটা পুথির পাতা কি ঘরের দেওয়াল কি পাটের কাপড়ই সাজাই সেটা বাইরের জিনিষ বাইরে বাইরেই