পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রূপ দেখা
২৮৩

রইলো এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করাই হ’ল কায তার, কিন্তু মানুষের মুন্দর চোখের ভুরুর ঠোঁটের হাতের আঙ্গুলের আগা থেকে পায়ের আঙ্গুলটি পর্যন্ত যে সমস্ত রেখার টানটোন দেখি সেই রেখা সমস্ত তো শুধু মানুষটিকে দেখতে কেমন এইটুকু প্রমাণ করতেই থাকলে না, সে সব রেখার ভঙ্গি দর্শকের মনের মধ্যে ভাবের তরঙ্গ তুলে দিলে, রেখা রূপ রস তিনে মিল্লো সেখানে এবং একেই বলতে হ’ল রূপরেখা—বাইরে এর স্থান অন্তরে এর স্থান। গ্রীক-স্মৃতিতে এই রেখা, বুদ্ধ-মূর্তিতে এই রেখা, চমৎকারী শুধু রেখা দিয়ে টানা চীন এবং জাপানী ছবিতে এই রেখা , শীতের গাছ মাঠের মাঝে একলা দাড়িয়ে নীল আকাশের কাছে সবুজ আশীৰ্বাদ প্রার্থনা করছে—সেখানেও এই রেখা। একটুকরো পাথর একখানা কাগজ খানিকটা শুকনো কাঠ এদের কি এমন শক্তি অাছে যে রসিকের মন টানে কিন্তু এদের যখন রূপদক্ষ রূপ-রেখার সঙ্গে মেলালে তখন মানুষে পাথরে যোগ হ’য়ে গেল প্রাণে প্রাণে । মাঠের ধারে পাতা-ঝরা গাছ আর তার ডালপালাগুলিকে বাতাস রেখার জাল পেতে ধরছে যখন, তখন আকাশের এবং মাটির সম্পর্কে এসে সুন্দর ঠেকছে তার আঁকা বাক৷ টানটোন, কিন্তু কাঠরে যখন তাকে কেটে ধরে এনেছে তখন দেখা গেল ধরিত্রী ও আকাশের সঙ্গে যে সম্বন্ধটি নিয়ে শুকনে গাছের আঁকা বাকা রেখাজাল সুন্দর ঠেকছিল সে সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয়ে গাছটি বিশ্ৰী হ’য়ে গেছে। বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন যে হতশ্ৰী গাছ তাকে জ্বালানি কাঠ করে কেউ আর কেউ বা সেই কাঠের টুকরো সমস্ত নিয়ে তাদের নতুন করে’ গড়ন দেয়, তখন আবার রূপ-লোকে তাদের স্থান হয়, রূপ-রেখার মন্ত্রবলে একখানা জ্বালানি কাঠ একটা ভাঙ্গা পাথর একটুকরো যেমন-তেমন কাগজ রূপে ও রসে ভর্তি হ’য়ে নতুন প্রাণ পেয়ে যায়। রেখা নিরূপিত করে দিলে যাকে আঁকা হবে তার স্থানটি চিত্রপটে, ডৌল দিলে রেখা, সুনির্দিষ্ট ভঙ্গি দিলে রেখা,—এক কথায় রূপের পত্তন দিলে রেখা। ঘর বাড়ি টেবেল চৌকি এদের পত্তন দিতে হ’ল সুনির্দিষ্ট সমস্ত রেখা দিয়ে ; কোথাও কসি—সে কসে বাধলে, কোথাও দাড়ি— দাড়িয়ে পাহার দিলে রূপকে ধরে রাখতে। এই ভাবের বন্ধনী-রেখা সমস্ত যা রূপদক্ষের হাতের কাছে হাজির রইলো তারা সকলেই ভূত্যের