পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্মৃতি ও শক্তি
২৮৭

এই যে সেনেট হাউসে এলেম, কিন্তু আসার পথে কি দেখলেম, কি কি ঘটনা, কোন কোন মুখ—তার কারো মনে আছে হয়তো একজন বন্ধু গেছে পাশ দিয়ে তারি একটুখানি, নয়তো কেউ মটর চাপা পড়ছিল তার একটু, কিংবা একটা বরাত চলছিল তারই ঝকমক্ ঝম্‌ঝম্ এমনি খানিক—যেগুলো জোর করে মনের মধ্যে এল তাদেরই একটু ছাপ রইলো মানসপটে, তার বেশি একটুও নয়। & কাল কি দিয়ে ভাত খেয়েছি মনে পড়ে, কিন্তু পরশুর কথা মুছে যায় মন থেকে যদি না সেদিন একটা বিশেষ রকম ভোজ খেয়ে থাকি । বড় ভোজের সন্দেশ কেমন, দই কেমন, রান্না কেমন, কে কে খেতে বসলেন, কি কি কথা হ’ল তার অনেকখানিই মনে রইলো । চোখ নিরীক্ষণ করে দেখলে একটা কিছু, তার আকার প্রকার ধরা রইলো মনে, চোখের সঙ্গে মনও দেখলে—না হ’লে দেখাই হ’ল না, চোখের উপর দিয়ে ভেসে গেল রূপটি। মন দিয়ে অভিনিবিষ্ট হ’ল মানুষ কিছুতে—ধারণা হ’ল তবে সম্পূর্ণরূপে পদার্থটির বা বিষয়টির। অনেকবার এককে দেখার ফলে মানুষ না দেখে তাকে আঁকতে, না বই খুলে তার কথা মুখস্থ বলতে, নিভুল করে’ নামত তাড়াতাড়ি বলতে, অঙ্ক এবং অঙ্কন করতে বেশ সক্ষম হ’য়ে ওঠে। এই ভাবের রূপচর্চায় রচনা করার মাল মসলা যথেষ্ট দখল হয়, কিন্তু রচনাশক্তি পাওয়া হয় একথা বলা চলে না। অদ্ভুত শক্তিবলে বেদ বেদান্ত ইতিহাস পুরাণ সবই একজন না হয় মুখস্থ রাখলে, কিন্তু সেইটুকু হ’লেই কথক হয় না তো কেউ, কবি হয় না তো কেউ ! মুখস্থ বিদ্যে কণ্ঠস্থ সরস্বতী নিয়ে অনেকখানি বিস্ময়কর ব্যাপার করেও দেখানো যায়, একভাবের দক্ষতাও প্রকাশ করা হয়, কিন্তু প্রবন্ধ করে কিছু বল, ছন্দে-বন্ধে কিছু বলা লেখা —এ সবের দক্ষতা অন্য পথে লাভ করে মানুষ। মনঃকল্পিত যা কিছু তার প্রকাশ মুখ্যতঃ মানুষের কল্পনা ও স্মৃতিশক্তির উপরে নির্ভর করে। এককে ঘিরে ঘিরে স্মৃতি ঘোরে ফেরে, কল্পনা অনেককে ধরে ধরে’ উধাও হ’য়ে চলে।” একের স্মৃতি কল্পনার শতদলে ধরা—এই হ’ল রূপদক্ষের রূপকর্মের উদ্দেশু । ফটোগ্রাফ যন্ত্র তার তো কোনো কিছু কল্পনা করার শক্তি নেই, সে শুধু আকার মাত্র পুনরুক্তি করে চলে হাজার দু'হাজার বার—যেভাবে