পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৯০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

পায়ের মাঝে ছখানি লঘুভার যেন পদ্মের পাপড়ি, একটা কবিতা, একটা গানও বল্পে বলা যায় জুতোপাটিকে। রূপস্থষ্টির নিয়ম ধরে গড়া হ’ল অথচ এই যে দুটো জুতো দু'রকম ভাব জানালে, এই যে একটা কেল্লার প্রাচীর আর মন্দির বা রাজপ্রাসাদের গোপুর ঘটে। একই স্থাপত্য বিদ্যার বলে তৈরী হ’ল, অথচ দিলে দু'রকম রস মানুষের মনে এবং রূপও দেখালে দু'রকম-এর রহস্য কোন খানে ? চীনের রাজার অর্থাভাব হয়েছিল, সেই কারণে চীনের প্রাচীর তাজমহলের প্রাচীরটার মতো মুন্দর হ’ল না, কঠোর শক্ত রূপ ধরে রইলো, অথবা চীনের কারিগর ভারতবর্ষের কারিগরের চেয়ে গেথে তুলতে কম ওস্তাদ ছিল বলে এমনটা হ’ল—এ কথাই নয়, মানুষের ইচ্ছা কোন পথ ধরলে কায করার পেলায়, সে শক্তি দিয়ে আর একটা শক্তি-বেগ প্রতিহত করতে চাইলে, অথবা নিজের মনে-ধর স্মৃতির মাধুরী দিয়ে পাষাণ গলাতে চাইলে—এই নিয়ে তফাৎ হ’ল ছটে রচনায়। আগুন যখন আতস বাজিতে লাগালেম, তখন আকাশ থেকে আগুনের পুষ্পবৃষ্টি ঝরে পড়লে, আবার আগুন যখন কামানের বারুদে দিলেম তখন একটা প্রাণঘাতী বিরাট শক্তির আবির্ভাব হ’ল । আতস বাজি যে আবিষ্কার করেছিল, সে তার স্মৃতিকে আগুনের ফুল দিয়ে বরণ করবে এই তার মনে ছিল ; আর যে কামান রচনা করলে, সে মনে রেখেছিল দূর থেকে বিরাট শক্তিকে অন্তের উপরে নিক্ষেপ করার শক্তির ভাবনা । মানুষের প্রতিভার প্রেরণায় তার যত কিছু শক্তি সমস্তই চালিত হ’য়ে এই দুই পথ ধরে শক্তিরূপ ও স্মৃতিরূপ পেয়ে চলেছে ভাষা সুর রঙ রেখা নাট্যভঙ্গি এমনি নানা উপাদানের সাহায্যে । ছেলেদের মধ্যে দেখি একটা ফুটে খেলুড়ে থাকে তারাই খেলার সর্দার, অন্য ছেলেরা তার দেখাদেখি খেলে। এই যে খেলুড়ে সদর্ণর এ প্রতিভাবান, সারাদিন ধরে নানা খেলা কল্পনা করে চলে, খেলার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এই রকম বয়স্কের মধ্যেও দু’একজন দেখা দেয় রচয়িতা লোক-রূপবিষয়ে এদেরই বলা যায় রূপদক্ষ, এর কথা দিয়ে মুর দিয়ে রঙ রেখা ইত্যাদি দিয়ে রূপ ফোটায়, রচনার অপূর্ব কৌশল সমস্ত আবিষ্কার করে চলে, নতুন নতুন সব রূপস্থষ্টি নিয়ে যেন খেলে’ চলে ।