পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৯৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

টুকরো একটা ছবি হয়ে রূপস্থষ্টির শ্রেণীভুক্ত হ’ল তা নয়। কাকের আকৃতির ছাপ এবং কাকের ছবি ছটি স্বতন্ত্র ব্যাপার। গান্ধার স্বর একটা কোন জন্তুর ডাক থেকে নেওয়া—এটা শাস্ত্রের কথা, এবং এর মধ্যে খানিকট সত্যও আছে। এখন একজন যদি নিজের স্মরণশক্তির জোরে ঐ জানোয়ারের ডাকটুকু ঠিক মনে রেখে বারবার ডেকে চলে, তবে সে গান্ধার স্বরই গাইলে একথা কেউ বলে না । ঠিক এই ভাবেই একটা কিছুর ছাপ যখন কাগজে ধরা গেল তখন সেটি সেই কিছুর ছবি হ’ল না, ছাপ হ’ল বলতে পারি। এটা অট্টালিকা, এটা কুটার, এটা সহর, এটা সহরতলী কিংবা এ অমুক ব্যক্তি, সে অমুক লোকটি—দেখে আঁকার শক্তি নিয়ে এ পর্যন্ত ধরা চল্লো। এই ভাবে যা রইলো তার কায রূপটাকে ধরে দেওয়া মাত্র, চিনিয়ে রাখা মাত্র, কথাটাকে ধরে রাখা জানিয়ে রাখা মাত্র । দরকার হ’লেই যাতে সেটাকে ঠিকঠাক পায় এই জন্যই রইলে তারা ধরা হাতের মুঠোয়, কণ্ঠে গাথা বা মস্তিষ্কে বন্ধ করা-ঘরে ধরা দরকারি বে-দরকারি নানা জিনিষের মতে, অভিধানে ধরা নানা কথার মতো । অভিধানে ধরা কথা—তাই নিয়েই তো কবিতা নভেল রূপকথা সৰই লেখা হয়, কিন্তু তাই বলে’ অভিধানকে রূপকথাও বলা চলে না, কবিতা নভেল কিছুই বলা চলে না। ব্যাকরণ ধরে কত কিম ইত্যাদি নিয়মে কথা সাজিয়ে গেলে কিংবা ঘটনাপরম্পরার অন্তর্গত করে সব কথা বলেও দেখি সেটা খবরের কাগজের প্রবন্ধ হয়, সাহিত্য হয় না, রূপ-রচনা হয় না । উত্তমাধম ভাবে এক দল লোক বসিয়ে তার ফটো— সে তো একটা নিপুণভাবে লেখা চিত্রের লোক-সন্নিবেশের সমান হ’য়ে উঠতে পারে না । কথা সুর আকৃতি স্মরণশক্তি এদের শক্ত করে’ ধরলে—তালা বন্ধ ঘরে যে ভাবে জমা টাকা ধরা থাকে লোহার বাক্সয়,—খরচের বেলায় কথা উঠলো মানুষটা কি ভাবে কেমন করে তা খরচ করলে ! কেমন ভাবে রূপ প্রকাশিত হ’ল কথায় স্বরে রঙে রেখায় নানা অঙ্গভঙ্গিতে—এইখানে এল মানুষের মন নিয়ে কথা, ভাব নিয়ে কথা, শুধু বাক্স খুল্লেম আর টাকা দিলেম তা নয়, কিসের কি মূল্য দিলেম, কোন কথার সুরের রঙের রেখার বা অঙ্গভঙ্গির বিনিময়ে কতখানি রস ভাব