পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্মৃতি ও শক্তি
২৯৭

সৌন্দর্য ইত্যাদি রূপ-রচনার জন্যে পেয়ে গেলাম এ বিচার বিতর্ক ওঠে । রূপ-সংগ্রহের মুহূত—সেখানে স্মরণশক্তি কায করছে, আর রূপ-রচনার মুহূত—সেখানে মানুষের মনে ধরা নানা বিষয়ের নানা জিনিষের স্মৃতি কায করছে । রাস্তায় যেতে দেখলেম একজনকে, অচেনা লোক, মনে তার কোনো স্মৃতি ধরে গেল না, কিন্তু স্মরণশক্তির দ্বারা তার চেহারা ধরা গেল আমার কাছে, বৃদ্ধ কিযুব কি শিশু মাত্র হয়ে, কালে কি মুন্দর কি শু্যামবর্ণ হ’য়ে, লম্বা কি খাটো কি গোলগাল মাঝারি মানুষটি হ’য়ে রইলো সে ধরা—এর বেশি একটুও নয়। পথ চলতে হাজার হাজার রূপ-সংগ্রহের মধ্যে সেও একটা সংগ্ৰহ-—তলিয়ে রইলো, হয়তে তার কথা মনেই পড়লো না আর । কিন্তু ঐ একজনের সঙ্গে ভাব হ’য়ে যাক, ঘরে বাইরে ওর স্মৃতি জড়িয়ে যাক মনে, তখন বুকের কোঁটোয় সে যত্নে ধরা র’য়ে গেল, বিশ্বের জিনিষের যত্নে ধরা স্মৃতির সঙ্গে এক সূত্রে গাথা হয়ে গেল সে। একটি মুখের স্মৃতি—সে যে ফুলের স্মৃতি চাদের স্মৃতির সঙ্গে সমান হ’য়ে ওঠে, একটুখানি মুখের হাসি, একটি কথার একটু মুর—সে যে আকাশের আলো জলের কলধ্বনির সঙ্গে সমান হ’য়ে যায়, তা এই স্মৃতিশক্তির যান্থমন্ত্রে । স্মরণশক্তির মধ্যে বদ্ধ রূপ সে সসীম এবং চিরকালেরও নয়, কিন্তু স্মৃতির মধু যাকে স্পর্শ করলে সেই রূপটি জলে স্থলে আকাশে অসীম রূপের সঙ্গে কালের অতীত জিনিষ হ’য়ে তুলতে থাকলে । জগতের যে কেউ এবং যা কিছু মন বিধলে তারই স্মৃতি রইলো মনে, সেই স্মৃতি যখন রূপ পেতে চল্লো, তখন মনোহর পথ ধরে প্রকাশ করতে চল্লো আপনাকে । বড় দুঃখের সঙ্গে জড়ানো কোন স্মৃতি মনোহর, বড় সুখের সঙ্গে জড়ানো স্মৃতি সেও মনোহর, কবিতায় গানে নাট্যে নৃত্যে ছবিতে মূর্তিতে, এর অজস্র সাক্ষী ধরা রয়েছে। তাজবিবির স্মৃতি বড় দুঃখের, কিন্তু সেটা তো একটা হুঃখের বিমলিন প্রকাশ হ’ল না, কত মুখ বিলাস কত মধুরতা কত সৌন্দর্যের স্মৃতির সঙ্গে এক হয়ে বাজলে সেই বেদনার সুর। বঁাশীর গান সকরুণ সুখের স্মৃতি দিয়ে বাজে বুকে, “রূপ দেখি আঁখি ঝুরে”—এ সব তো মিছে কথা নয় 1. স্মৃতি একেরই কিন্তু ছন্দে বন্ধে নানা প্রবন্ধে বারে বারে তার কথা O. P. 14–38