পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৯৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

বলে’ শেষ করা গেল না, আর একটা কিছু স্মরণ করে রাখা গেল, সময় মতো সেটা উচ্চারণ করে দিলেম ঠিকঠাক,—এ অন্য জিনিষ। চীনের প্রাচীর আর তাজমহল পৃথিবীতে দুই আশ্চর্য রচনা বলেই বিখ্যাত, কিন্তু এ দুয়ের মধ্যে রচনা-মূহুতের ছুটে আশ্চর্য রহস্য ধরা পড়েছে। চীনের প্রাচীরের বেলায় স্মৃতি কায করছে না। রাজশক্তি জোর হুকুম জোর তলব দিলে গঠনশক্তিকে শক্রকে বাধা দিতে প্রকাণ্ড শক্তিমান অজগরের মতে, প্রাচীর সেখানে পর্যত ঘিরে দেখা দিলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে —ম্মুতি ধরলে না মানুষ, পাথরের প্রাচীরেব শক্তিকেই ধরে গেল। তাজমহলে সেখানে স্মৃতির স্পর্শ অম্লান ভাবে পড়লো। বমর্ণর একটি মন্দিরের প্রাচীর সেও সাপের মতো আঁকা বাকা, কিন্তু চীনের প্রাচীরের মতে শক্ত ব্যাপার নয়, কোন কালের রূপকল্পনা তারি স্মৃতি ঢেউ দিয়ে এল মন্দির ঘিরে নিতে। পদ্মার পুল সেখানে শক্তি এবং হয়তো বিলাতের কোন একটা শক্ত বাধুনির স্মৃতিও আছে একটু একটু, কিন্তু চীন দেশের বাসন্তী নদীর (Yellow river) একটি শাখার এপার ওপার এক করে একটা মনোহর সেতু দুই তীরের মাটির বুকের একটুখানি স্পন্দনের স্মৃতি ধরে প্রকাশ পেলে সুন্দর বাকা নিয়ে, তার সঙ্গে তুলনায় পদ্মার ব্রিজে শক্তি ছাড়া আর কিছুই নেই বল্পেও চলে, কিন্তু রূপদক্ষ এই পদ্মা ব্রিজ অঁাকুক স্মৃতির মাধুরী মিশিয়ে—সে হবে একটি অপূব ছবি,—ফটোগ্রাফ যা দিতে পারে না, আসল ব্রিজ যা দিতে পারে না । রূপের সংক্ষেপ, রূপের বিস্তৃতি, এমনি নানা ব্যাপার যা রূপকমের অন্তর্গত—সবই নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের স্মরণশক্তি এবং স্মৃতি দ্বারা । স্মৃতির প্রেরণা না স্মরণশক্তি ধী-শক্তি এমনি নানা শক্তির প্রেরণ এই নিয়ে রচনা সমস্ত নানা শ্রেণীতে বিভক্ত হ’য়ে যাচ্ছে আপনা আপনি । রূপকমের খুঁটিনাটির মধ্যে না গিয়ে সহজ উপায়ে রূপের সঙ্গে পরিচয় । করে নেওয়া হ’তে পারে এই স্মৃতির এবং যাকে বলতে পারি যান্ত্রিক শক্তির পথ ধরে । যা নিজের মনে ধরা রইলো না, সে মুঠোতেই থাক গলাতেই থাক যা মাথাতেই থাক তা নিয়ে মনোহর কিছু করা মুস্কিল । আমার যা মনে ধরলে সেইটিকেই অপরের মনে ধরানোর পক্ষে কত যে বাধা তার ঠিক ঠিকানা নেই, স্থান কাল পাত্র এর নানা বাধা নিয়ে