পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্মৃতি ও শক্তি
২৯৯

দাড়ায় রসদাতা ও রস-পিপাসুর মধ্যে। রূপ-রচনার মম উদঘাটন সেও স্থান কাল পাত্র সাপেক্ষ হয়ে পড়ে— এ বিপত্তি নিবারণের উপায় তে রচয়িতার হাতে নেই, সে অাছে রসিক সমালোচকদের হাতে । সমালোচনা একটা শক্তির কায, তার দ্বারা তাই সব সময়ে রসের ব্যাপারের ঠিক যাচাই হয় না, রচনার শক্ত দিকের কথাই জানিয়ে চলে সমালোচনা। স্মৃতির প্রকাশ সে পথের মতে বিকাশের পরিপূর্ণতা পেয়ে থামে, পরিমল তার বাতাস বয়ে আনে, যারা ফুল দেখছে না তাদের কাছে জানায় ফুল ফুটলো। রসিকের সমালোচনার শক্তি যেখানে বাতাসের পরিমল বহনের মতে কায করে, সেখানে রচনার রস বিস্তৃতি পায়, তখন রসিকের স্মৃতির সঙ্গে রচয়িতার স্মৃতির মিলনে রসভোগের বাধা সমস্ত দূর হয় এক মুহূতে। বাতাস একাধারে স্ব-কু দুয়েরই খবর দেয়, সে সংবাদ-বাহক, কিন্তু রসিক সে শক্তিধর জীব, রসের খবরই নেয় যট্রপদের মতে । মক্ষিকার সমালোচনা সে রূপের ও রসের বিপরীত সমালোচন । রচয়িতার ইচ্ছার সঙ্গে যেমন রচনার যোগ তেমনি মক্ষিক ও ষটপদ দুই সমালোচকের ইচ্ছার সঙ্গে রচনার উপভোগেরও যোগাযোগ, কাযেই একই কথা নানা রকমে বলে মানুষ এবং সেই একই কথার নানা ব্যাখ্যা দেয় মানুষ । কাল হচ্ছে সব চেয়ে বড় বিচারক এ ক্ষেত্রে, সে দেখি কোন রচনাকে স্মৃতির মধু দিয়ে অমর করে রাখলে, কোন কিছুকে একেবারে লোপ করে দিয়ে গেল । বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এইভাবে কত জিনিষ কালে কালে স্মৃতির ও সৌন্দর্যের ভাণ্ডারে ধরা রইলো, আবার কত জিনিষ একেবারে লোপ পেয়ে গেল, তার হিসেব নিলে দেখা যায় যে, যা স্মৃতির বিষয় হ’ল সেই রইলে ধরা, আর যা তা না হ’ল সে গেল মরে । স্মৃতি জাগিয়ে রাখার হিসেবের মধ্যে রচনার নিত্যতা এবং অনিত্যতা অনেকখানি ধরা আছে দেখি । “মত্ত দাজুরি” এরি ডাকটুকু যদি কোন শক্তি ও কৌশলে ধরে কানের কাছে বাজানো যায় তবে সেটা বিষম ব্যাপার হয়ে ওঠে, কিন্তু বর্ষ।-রাতের নানা স্মৃতির দ্বারা মধুর হয়ে যখন সে ডাক আসে কানে, তখন কবিতা লেখা হ’য়ে যায় দাঙ্কুরির ডাকের উপর।